Advertisement
E-Paper

সব্জি চাষ নষ্ট হয়েছে, ধানেও আর আশা দেখছেন না চাষি

একটানা বৃষ্টির পরে রবিবার আকাশ কিছুটা ধরেছে। কিন্তু রাজ্যের অন্যতম ধান ও সব্জি উৎপাদক জেলা হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার চাষির মুখে হাসি নেই। খেত যে জলের তলায়!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৩
জলের নীচে ধানের খেত। খানাকুলে মোহন দাসের ছবি।

জলের নীচে ধানের খেত। খানাকুলে মোহন দাসের ছবি।

একটানা বৃষ্টির পরে রবিবার আকাশ কিছুটা ধরেছে। কিন্তু রাজ্যের অন্যতম ধান ও সব্জি উৎপাদক জেলা হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার চাষির মুখে হাসি নেই। খেত যে জলের তলায়!

কোথাও তিন ফুট, কোথাও বা পাঁচ ফুট জল দাঁড়িয়ে। সব্জি চাষ তো আগেই নষ্ট হয়েছে, যা পরিস্থিতি তাতে ধান চাষেও আর আশার আলো দেখছেন না কোনও এলাকার চাষিই। এর পরে ডিভিসি আরও জল ছাড়লে বা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না কেউই।

পুড়শুড়ার কেলেপাড়ার চাষি প্রশান্ত ঢোলে বিঘে কুড়ি জমিতে আমন চাষ করেছেন। দিন সাতেক ধরে তাঁর ধানজমি ডুবে রয়েছে। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘আলুতে দাম মেলেনি। ভেবেছিলাম ধান ফলিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেব। কিন্তু বন্যায় সেই আশা প্রায় নির্মূল হতে বসেছে। যা পরিস্থিতি, একটুও ধান বাঁচবে কি না, জানি না।’’ একই সুর তারকেশ্বরের নছিপুর গ্রামের চাষি রামপ্রসাদ গুপ্তের গলাতেও। ১৮ কাঠা জমির বেশির ভাগেই আমন চাষ করেছেন। সামান্য কিছু জমিতে বেগুন, পটল, ঝিঙে ছিল। আগেই সে সব নষ্ট হয়েছে। এখন আমন প্রায় পুরোটাই জলে ডুবে রয়েছে। রামপ্রসাদবাবুর কথায়, ‘‘আলুর অভাবী বিক্রি করতে হয়েছে। এখন ধানটাও মনে হয় শেষ হয়ে গেল। প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। কী করে শুধব, কী করেই বা পরের চাষ করব, কিছুই জানি না।’’

হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া, তারকেশ্বর, পুরশুড়া, আরামবাগ— জেলার প্রায় সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। দুর্যোগের জেরে চাষে যে বিপর্যয় হয়েছে তা মেনে নিয়েছেন জেলা কৃষি আধিকারিক শান্তিরঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক দিন ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠাচ্ছি। কিছু বীজ, সার চাওয়া হয়েছে। জল নেমে গেলে যে ধান বেঁচে থাকবে, তা যাতে সার দিয়ে বাঁচানো যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, পরবর্তী চাষের জন্য চাষিদের সর্ষে, তিল, বাদাম, আলু ইত্যাদি চাষে উৎসাহিত করা হবে। শ্রী পদ্ধতিতে চাষে জোর দেওয়া হবে।’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু আমনের বীজতলায় জল দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪৫৭৫ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ২৭৪৫ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে। ধান রোয়া হয়েছিল, এমন ৭৮ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমি জলের তলায়। এর ৬৫ শতাংশই পুরো নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, খরিফ চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায়। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের চাষই পুরো নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।

শুধু আরামবাগ মহকুমারই খানাকুল-১ ব্লকে ৬৯৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান জলে ডুবে রয়েছে। বাকি জমির উপর দিয়ে জল বইছে। খানাকুল-২ ব্লকের ৩৮৫০ হেক্টর ধানজমির মধ্যে ৩২৯৫ হেক্টরের ধানই স্থির জলে ডুবে। আর পুড়শুড়ার ৪৪০০ হেক্টর জমির পুরোটাই চলে গিয়েছে জলের তলায়। সেই তুলনায় আরামবাগের ৯০০০ হেক্টর জমির আমন ধানের মধ্যে প্রায় ৪৪০০ হেক্টর জমির ধানে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আর গোঘাটের দু’টি ব্লকে মোট ১৩০০০ হেক্টর জমির মধ্যে ১৫০০ হেক্টরের ফসল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্থির জলে ডুবে থাকা সমস্ত জমির ফসলেই ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার।

এই পরিস্থিতিতে সমবায়গুলিও দুশ্চিন্তায় পড়েছে। বহু চাষি সমবায় থেকে কৃষিঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু আলুতে দাম না মেলায় সেই ঋণ এখনও শোধ করতে পারেননি। তার উপর আবার ঋণ নিয়ে আমন ফলিয়েছেন। যা পরিস্থিতি, তাতে সেই ঋণও কতটা আদায় হবে, তা নিয়ে সমবায়ের কর্তারা দুশ্চিন্তায়।

তারকেশ্বরের বিবেকানন্দ কৃষি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক গুরুপ্রসাদ গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রচুর জমির চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাষিদের অবস্থা শোচনীয়। ফলে তাঁরা ঋণ কী করে শোধ করবেন, বুঝতে পারছি না। সরকার আলু বা ধানের ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। তা হলে অনেকটা সুরাহা হবে। না হলে কিন্তু চাষিদের পাশাপাশি সমবায়গুলিও মারা পড়বে।’’

কৃষিঋণ মকুবের দাবি তুলছেন চাষিরাও। কাল, মঙ্গলবার এ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে জেলা কৃষি আধিকারিকদের আলোচনা রয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। -নিজস্ব চিত্র।

rain flood khanakul farmer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy