Advertisement
E-Paper

একরত্তি ছেলের সাক্ষ্যে যাবজ্জীবন সাজা বাবার

মাঝরাতে চার বছরের ছেলেটা দেখেছিল, বঁটি দিয়ে মাকে কোপ মারছে বাবা। মা আর্তনাদ করছে। ছেলেটি ভয়ে কাঁপছিল। বাবা মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দিল চামচ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:১৭
সাজাপ্রাপ্ত: আদালত চত্বরে আবুল শেখ। নিজস্ব চিত্র

সাজাপ্রাপ্ত: আদালত চত্বরে আবুল শেখ। নিজস্ব চিত্র

মাঝরাতে চার বছরের ছেলেটা দেখেছিল, বঁটি দিয়ে মাকে কোপ মারছে বাবা। মা আর্তনাদ করছে। ছেলেটি ভয়ে কাঁপছিল। বাবা মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দিল চামচ। তারপরে উইকেট দিয়ে শুরু করল মার। কিছুক্ষণের মধ্যে মা চুপ। আর সাড়াশব্দ নেই। বাড়ির পাঁচিল টপকে পালাল বাবা।

তখন চুপ থাকলেও পরে ঘটনার কথা সবাইকে জানিয়েছিল একরত্তি ছেলেটা। সাক্ষ্য দিয়েছিল আদালতেও। মূলত সেই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ডানকুনির আকডাঙার বাসিন্দা, স্ত্রীকে খুনে দোষী আবুল শেখকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিল আদালত। শনিবার শ্রীরামপুর আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মহানন্দ দাস ওই সাজা শোনান আবুলকে। শুক্রবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, এই মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার মধ্যে দোষীর একরত্তি ছেলের সাক্ষ্য মামলার নিষ্পত্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। স্ত্রীকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাবাসের পাশাপাশি দোষীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। এ ছাড়া, বধূ নির্যাতনের দায়ে তিন বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে দোষীর। অনাদায়ে আরও দু’বছর কারাবাস।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে ট্রাক-চালক আবুলের সঙ্গে ডানকুনিরই আকডাঙার যুবতী সায়েরা বেগমের বিয়ে হয়। আবুল তখন ডানকুনির চাকুন্দিতে থাকত। বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য কলহ লেগেছিল। দম্পতির দুই ছেলেমেয়ে। বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার দাবিতে স্ত্রী-র উপরে অত্যাচার করত ওই যুবক। সায়েরার বাবা আকডাঙায় নিজের বাড়ির কাছেই মেয়ে-জামাইকে বাড়ি করে দিলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে গিয়ে সায়েরা জানান, টাকা নিয়ে না গেলে স্বামী তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তিনি স্বামীর সংসারে ফিরতে চান না। ওই রাতেই অবশ্য আবুল স্ত্রীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

পরের দিন সকালে খেতে যাওয়ার সময় সায়েরার বাবা সৈফুদ্দিন মণ্ডল মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও সাড়া পাননি। গেট ভেঙে ঢুকে ঘরের ভেজানো দরজা খুলতেই তিনি দেখেন, মেয়ের রক্তাক্ত দেহ বিছানায় পড়ে। মাথার ‌ঘিলু বেরিয়ে গিয়েছে। পেটে একটি চামচ ঢোকানো। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত। আবুল নেই। ছেলেমেয়েরা ভয়ে জড়সড়ো হয়েছিল। ছেলেটিই দাদুকে জানায়, বাবাই মেরে ফেলেছে মাকে। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ঘটনার সময় নিহতের বয়স ছিল ৩১ বছর। আবুল তাঁর থেকে বছর পাঁচেকের ছোট।

ডানকুনি থানায় আবুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সইফুদ্দিন। খুন এবং বধূ নির্যাতনের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। আবুলকে গ্রেফতার করা হয়। জেরায় সে অপরাধ কবুল করে জানায়, রাগের বশে সে ঘুমন্ত স্ত্রীকে মেরে ফেলে। বঁটি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে দেয়। পেটে চামচ ঢুকিয়ে দেয়। মাথায় উইকেটের বাড়ি মারে। তাতে ঘিলু বেরিয়ে যায়। একটি লুঙ্গি দিয়ে রক্ত মুছে সে বাড়ির পাঁচিল টপকে পালায়। আদালতে জামিন পায়নি আবুল।

মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন প্রসেনজিৎ কর্মকার। সরকারি আইনজীবী জয়দীপবাবু জানান, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা উইকেট, বঁটি, চামচ, লুঙ্গি, বিছানার গদি এবং চাদর উদ্ধার করে পুলিশ। ধৃতের স্বীকারোক্তি এবং ঘটনার পুনর্নির্মাণের ভিডিয়োগ্রাফি আদালতে পেশ করা হয়। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানান, ওই যুবতী খুন হয়েছেন। মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ধৃতের নাবালক ছেলে-সহ ১২ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

Serampore Lifer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy