অ-সচেতন: লাইফ জ্যাকেট রয়েছে হাতেই। নিজস্ব চিত্র
কালীপূজো শেষ। কাউন্টডাউন শুরু চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর। তেলেনিপাড়া জেটি দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার উৎসবের দিনগুলিতে জলপথে দর্শনার্থী পরিবহণে বিশেষ সতর্কতা জারি করতে চলেছে হুগলি জেলা প্রশাসন। যাত্রীদের লাইফ-জ্যাকেট বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকেই গা করেন না। এ বার তা নিয়ে কঠোর হচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। ষষ্ঠী থেকে একাদশী পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে লঞ্চও।
নামে ‘চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী’ হলেও আসলে এই পুজোর বিস্তৃতি একদিকে ভদ্রেশ্বর, অন্যদিকে চুঁচুড়ার একাংশ পর্যন্ত। কাতারে কাতারে মানুষ পুজো দেখতে আসেন। তার মধ্যে একটি বড় অংশ আসেন জলপথে, উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার বিভিন্ন ঘাট থেকে গঙ্গা পেরিয়ে। পুজোর সময় সেই সব যাত্রীদের সুষ্ঠু ভাবে পারাপার নিয়েই হুগলির সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলি এখন চিন্তিত। বিশেষ করে কয়েক মাস আগে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় প্রবল স্রোত আর মানুষের চাপে অস্থায়ী জেটি ভেঙে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য পরিকল্পনা চলছে। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল হয়ে বহু মানুষ চন্দননগরের রানিঘাটে নেমে পুজো দেখতে আসেন। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, রানিঘাটের পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল। তবে কোনও রকম দুর্ঘটনা এড়াতে জেটি সংস্কার করা হচ্ছে। চুঁচুড়া লঞ্চঘাট, চন্দননগরের গোন্দলপাড়া ঘাট, ভদ্রেশ্বরের বাবুঘাট, তেলেনিপাড়া ঘাট, চাঁপদানির পলতাঘাট হয়েও প্রচুর দর্শনার্থী যাতায়াত করেন। তবে পলতাঘাট, গোন্দলপাড়া ঘাটে পাকা জেটি নেই। দুর্ঘটনার পর থেকে রাজ্য সরকারের নির্দেশে তেলেনিপাড়া ঘাট বন্ধ রয়েছে। ফলে, জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে ওই ঘাট বন্ধ থাকায় যাত্রীর বাড়তি চাপ পড়বে বাবুঘাট বা রানিঘাটের উপর। ফলে, সেখানে নিরাপদে যাত্রী পারাপারের ব্যবস্থা করার দিকেই এখন পুর-কর্তৃপক্ষের নজর।
জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এই দুই ঘাটেই দু’টি করে লঞ্চ চলে। জগদ্ধাত্রী পুজোয় আরও চারটি করে লঞ্চ দেওয়া হয়। এ বারও একই ব্যবস্থা থাকছে। চুঁচুড়া লঞ্চঘাটে অন্য বার অতিরিক্ত তিনটি লঞ্চ চালানো হয়। এ বার তা আরও একটি বাড়ানো হচ্ছে।
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাত্রীদের সুরক্ষায় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হবে না।’’ ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘তেলেনিপাড়া ঘাটের চাপ বাবুঘাটের উপর পড়বে বলে মনে হচ্ছে। আমরা প্রস্তুত। দুর্ঘটনা এড়াতে পরিকাঠামোয় কোনও ফাঁক থাকবে না।’’ আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস বলেন, ‘‘সর্বত্রই পর্যাপ্ত লঞ্চ চলবে। দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারের তরফে লাইফ জ্যাকেট-সহ যা বিধিনিষেধ রয়েছে, যাত্রীদের তা মেনে চলতে হবে।’’
চন্দননগরের পাশাপাশি বাংলার প্রথম বারোয়ারি বিন্ধ্যবাসিনীর পুজো দেখতে বহু মানুষ নদিয়ার শান্তিপুর হয়ে গঙ্গা পেরিয়ে গুপ্তিপাড়ায় আসেন। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ভিড়ের চাপ সামলাতে ভুটভুটির পরিবর্তে এখানে গাড়ি পারাপারের ভেসেলে যাত্রীদের পার করানো হবে। ওই ঘাটের নড়বড়ে পরিকাঠামো সম্প্রতি কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। যদিও লাইফ-জ্যাকেট পড়া বাধ্যতামূলক হলেও যাত্রীদের তরফে সাড়া মেলে না বলে অভিযোগ। নানা অজুহাতে যাত্রীরা তা গায়ে চাপাতে চান না। অনেকে আবার জ্যাকেট হাতে নিয়ে বসে থাকেন। শনিবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরাতে মাইকে টানা ঘোষণা পর্যন্ত করতে হয়েছে।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, জলপথে দুর্ঘটনায় রাশ টানতে সরকার নানা পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু যাত্রীরা সচেতন না হলে গোটা পরিকল্পনাই জলে যাবে। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় এ ব্যাপারে সতর্ক ভাবে নজর রাখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy