বিক্রি করা মাছচাষের ওষুধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে এক মাছচাষির পক্ষ নিয়ে একটি দোকানে ভাঙচুর চালাল এক দল গ্রামবাসী। রবিবার সকালে এই ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে হুগলির পান্ডুয়ার মেলাতলা এলাকা। অভিযোগ, ওই দোকানে ভাঙচুরের প্রতিবাদ করায় অন্য ব্যবসায়ীদের গায়ে হাত তোলা হয়। হামলাকারীদের মধ্যে তৃণমূলের লোকজনও ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীরা প্রায় এক ঘণ্টা জিটি রোড অবরোধ করেন। বিজেপি নেতাকর্মীরাও তাতে সামিল হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলাতলার ওই দোকান থেকে পাটরা এলাকার এক মাছচাষি শনিবার সন্ধ্যায় পুকুরে দেওয়ার জন্য এক শিশি ওষুধ কেনেন। রবিবার সকালে বেশ কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ফের তিনি ওই দোকানে আসেন। অভিযোগ তোলেন, তাঁকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা হয়েছে। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। অভিযোগ, তখনই ওই মাছচাষি এবং তাঁর সঙ্গীরা দোকানে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। প্রচুর কীটনাশক ও সার নষ্ট করা হয়। টেবিল-চেয়ার উল্টে দেওয়া হয়। ক্যাশবাক্স আছড়ে ফেলা হয়। কাগজপত্র তছনছ করা হয়। আশপাশের ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানালে হামলাকারীরা তাঁদেরও রেয়াত করেনি বলে অভিযোগ।
পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই হামলাকারীরা পিঠটান দেয়। পরে দু’পক্ষই থানায় যায়। তবে পুলিশের দাবি, কোনও পক্ষই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তারা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেয়। লিখিত অভিযোগ পেলে সেই মোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘ওই দোকানদার এবং সংশ্লিষ্ট মাছচাষি থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই।’’ ওই মাছচাষির সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।
তবে, ব্যবসায়ীরা অবশ্য ‘দুষ্কৃতী’দের দৌরাত্ম্যের অভিযোগে সরব হন। শাসকদলের একাংশের মদতে পান্ডুয়া জুড়ে ‘নৈরাজ্য’ চলছে এই অভিযোগে পথে নামেন বিজেপি নেতৃত্বও। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ শুরু হয় অবরোধ। অবরোধকারী ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁদের তরফে এফআইআর করা হচ্ছে। পান্ডুয়া মেলাতলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উদয় সাহা বলেন, ‘‘দিনের বেলা এ ভাবে যদি দোকানে এবং ব্যবসায়ীদের উপর হামলা হয়, তা হলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায় বুঝুন!’’
পান্ডুয়ার বিজেপি প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য অবরোধে সামিল হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষকে ভরসা জোগানোর চেষ্টা করছে। এই সময় তৃণমূলের আশ্রিত কিছু লুম্পেন ব্যবসায়ীদের উপর হামলা করল। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশ কেন এই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করল না? পুলিশের নিরপেক্ষতা কোথায়? সাধারণ মানুষ এর পরে ভরসাটা পাবেন কোথা থেকে? আমি গোটা বিষয়টা কমিশনকে জানাচ্ছি।’’ পান্ডুয়ার তৃণমূল প্রার্থী রহিম নবি ঘটনার নিন্দা করে জানান, দলের কেউ যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে দল নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’’