Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দামোদর ঘুম কাড়ল জাঙ্গিপাড়ার

এ তল্লাটে বর্ষার মেঘ দেখলেই ভয় পান গ্রামবাসী। এই বুঝি দামোদর উপচে ঢুকে পড়বে গ্রামের চৌহদ্দিতে! এ বারেও তেমনটাই হয়েছে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে মঙ্গলবার রাত থেকেই দামোদরের কূল ছাপিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে রশিদপুর পঞ্চায়েতের আঁকনা, পশপুর, হরিহরপুর এবং রাজবলহাট-১ পঞ্চায়েতের ছিটগোলা গ্রামে।

রাস্তাতেই অস্থায়ী শিবির তৈরি করে বাস আরামবাগের গীর্জাতলায় । নিজস্ব চিত্র

রাস্তাতেই অস্থায়ী শিবির তৈরি করে বাস আরামবাগের গীর্জাতলায় । নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

ক্রিকেট পিচের মতো তখনও জেগে ছিল পটল চাষের মাচাগুলি। ডেকচিতে পটল তুলে বুক জল ঠেলে সেখান থেকে রাস্তার দিকে আসছিলে‌ন বছর পঁয়তাল্লিশের কাশীনাথ মান্না।

জাঙ্গিপাড়া ব্লকের আঁকনা গ্রামের বাসিন্দা কাশীনাথ মূক-বধির। জলে দাঁড়িয়েই হাত নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিল‌েন, কিছুক্ষণের মধ্যে ওই মাচাও জলের তলায় চলে যাবে। যেটুকু পেরেছেন ফসল তুলে ফিরছেন।

এ তল্লাটে বর্ষার মেঘ দেখলেই ভয় পান গ্রামবাসী। এই বুঝি দামোদর উপচে ঢুকে পড়বে গ্রামের চৌহদ্দিতে! এ বারেও তেমনটাই হয়েছে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে মঙ্গলবার রাত থেকেই দামোদরের কূল ছাপিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে রশিদপুর পঞ্চায়েতের আঁকনা, পশপুর, হরিহরপুর এবং রাজবলহাট-১ পঞ্চায়েতের ছিটগোলা গ্রামে। তখন থেকেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি গ্রামবাসী। বুধবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সব এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। সুকান্ত পার্ক, পশপুর এবং হরিহরপুর কালীতলায় বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়েছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। জাঙ্গিপাড়া থেকে উদয়নারায়ণপুর রাস্তার উপর দিয়ে হু হু করে জল বইছে। ফলে, বন্ধ যান চলাচল। ওই অংশের সঙ্গে হাওড়ার যোগাযোগ এর জেরে
কার্যত বিচ্ছিন্ন।

ডুবন্ত: জলে ডুবেছে খেত। জল পেরিয়ে সেখান থেকেই ফসল তোলা জাঙ্গিপাড়ায়।

প্রশাসন জানায়, ইতিমধ্যে কয়েকটি কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে। প্রায় ২১ হেক্টর জমির ফস‌ল নষ্ট হয়েছে। কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। সাড়ে চারশো মানুষকে সুকান্ত পার্ক এলাকায় ফ্লাড শেল্টার এবং পশপুর ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে আনা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ মুড়ি-চিঁড়ে এবং শিশুখাদ্য মজুত রাখা হয়েছে। দুপুরে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া গ্রামবাসীদের জন্য ভাত, ডাল এবং আলু-পটলের তরকারি রান্না করা হয় পঞ্চায়েতের তরফে।

বিডিও জামিল আখতার বলেন, ‘‘উদ্ধারকাজ বা ত্রাণ পাঠানোর জন্য দু’টো নৌকোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্পিডবোটও আনা হচ্ছে। বাঁধে সর্বক্ষণ নজরদারি করা হচ্ছে। বাঁধে আলোও লাগানো হয়েছে।’’ সেচ দফতরের চাঁপাডাঙা ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘তিনটি জায়গায় বাঁধে গর্ত দেখা গিয়েছে। বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে জায়গাগুলি মেরামত করা হচ্ছে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে সর্বদাই নজর থাকছে।’’

ডিভিসি জল ছাড়লেই এই দুর্ভোগ থেকে কোনও বছরই রেহাই পান না গ্রামবাসী। তাই ক্ষোভ বাড়ছে তাঁদের। কেশব পাঁজা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘প্রতি বছরেই আমাদের এমন দুর্দশা হয়। যত দিন ঠিকঠাক ভাবে দামোদর সংস্কার করা না হচ্ছে, তত দিন বোধ হয় এই অবস্থা থেকে মুক্তি নেই। ও দিকে উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের বাঁধ শক্তপোক্ত ভাবে মেরামত করা হয়েছে। সে জন্য সব জল আমাদের দিকেই ঢুকছে। ডিভিসি আরও জল ছাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’’

তারাপদ বাগ নামে এক গ্রামবাসী ছ’বিঘে জমিতে কচু চাষ করেছিলেন। তাঁর জমি এখন জমির তলায়। তিনি বলেন, ‘‘৫০ কেজির মতো কচু তুলতে পেরেছি। বাকি ফসল বোধহয় ঘরে আর তুলতে পারব না।’’ একই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন আরও কয়েক
জন গ্রামবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE