Advertisement
E-Paper

ভদ্রেশ্বরে কিশোরকে খুনে যাবজ্জীবন সাজা ৪ জনের

সাজাপ্রাপ্তেরা হল মহম্মদ মুজাহিদ খান, মহম্মদ শামিম, মহম্মদ ইফতিকার ওরফে সাগর এবং মহম্মদ শাহবাজ ওরফে চাঁদ। মুজাহিদ এবং শাহবাজ তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা। অন্য দু’জনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। জাভেদদের বাড়ির কাছেই মুজাহিদের লজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০০:৪০
আদালত চত্বরে সাজাপ্রাপ্তেরা। নিজস্ব চিত্র

আদালত চত্বরে সাজাপ্রাপ্তেরা। নিজস্ব চিত্র

নিখোঁজ থাকার দিন কয়েক পরে চোদ্দ বছরের কিশোরের কাটা মুণ্ডু এবং দেহাংশ উদ্ধার হয়েছিল বাড়ির পাশেই একটি লজের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে। প্রায় সাড়ে আট বছর আগে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় ওই কিশোরকে খুনের দায়ে লজ মালিক-সহ চার জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিল আদালত। চন্দননগর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) অভিরাম বর্মণ শুক্রবার ওই আদেশ দেন। নিহত কিশোরের নাম জাভেদ আলি।

সাজাপ্রাপ্তেরা হল মহম্মদ মুজাহিদ খান, মহম্মদ শামিম, মহম্মদ ইফতিকার ওরফে সাগর এবং মহম্মদ শাহবাজ ওরফে চাঁদ। মুজাহিদ এবং শাহবাজ তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা। অন্য দু’জনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। জাভেদদের বাড়ির কাছেই মুজাহিদের লজ।

মামলার সরকারি আইনজীবী চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি। ওই দিন দুপুরে মুজাহিদের নির্দেশে ক্যারাম খেলার নাম করে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া জাভেদকে ওই লজে ডেকে নিয়ে যায় শামিম। সেখানে মুজাহিদ ছাড়াও চাঁদ, ইফতিকার এবং গাজি খান নামে তিন দুষ্কৃতী ছিল। জাভেদের সঙ্গে তারা কিছুক্ষণ ক্যারাম খেলে। এর পরেই গলার নলি কেটে ওই কিশোরকে খুন করে তারা। ভোজালি এবং চপার দিয়ে জাভেদের মুণ্ডু কেটে একটি পিঠব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে। দেহ দু’টুকরো করে কেটে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে। সেগুলি একটি চটের ব্যাগে ভরে লজের পিছনে সেপটিক ট্যাঙ্কে ঢুকিয়ে দেয়। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র, নিজেদের রক্তমাখা লুঙ্গি, জামাও প্যাকেটে ভরে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়। কেউ যাতে বুঝতে না পারে, সে জন্য সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনার মুখ সিমেন্ট দিয়ে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়।

এ দিকে, বিকেল গড়িয়ে গেলেও জাভেদ বাড়িতে না ফেরায় খোঁজ শুরু হয়। এক দিন পরে বাড়ির লোকেরা ভদ্রেশ্বর থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরি করেন। ঘটনার দিন স্থানীয় বাসিন্দারা জাভেদকে লজে ঢুকতে দেখেছিলেন। বিষয়টি জেনে পুলিশ মুজাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই গোটা ঘটনা সামনে আসে। সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে জাভেদের দেহ উদ্ধার হয়। তার পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ পেয়ে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপ এবং একই উদ্দেশ্যে একাধিক লোক অপরাধ সংগঠিত করার ধারায় মামলা রুজু করে মুজাহিদ, শামিম, ইফতিকার এবং চাঁদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কেউই জামিন পায়নি। ‘অপারেশন’ সারতে ইফতিকার এবং চাঁদকে ভাড়া করেছিল মুজাহিদ। অপর এক অভিযুক্ত গাজি খানকে পুলিশ ধরতে পারেনি।

মামলার সরকারি কৌঁসুলি চণ্ডীচরণবাবু জানান, শুনানিতে ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। বৃহস্পতিবার বিচারক ওই চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন বিচারক তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাবাসের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। চণ্ডীচরণবাবু বলেন, ‘‘আক্রোশবশত ছেলেটিকে হত্যা করা হয়েছিল।’’

জাভেদের পরিবারের লোক এবং প্রতিবেশিরা এ দিন আদালতে এসেছিলেন। তার মা সাহিদান বিবি বলেন, ‘‘ওদের অসামাজিক কাজ দেখে ফেলায় ছেলেকে নৃশংস ভাবে মেরে ফেলেছিল। কোনও দিন যেন ওরা জেল থেকে বেরোতে না পারে।’’

Crime Murder Bhadreswar Police Life Imprisonment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy