এই শহর ছিল এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ। গঙ্গাপাড়ের এই শহরের ইতিহাসের সঙ্গে ফরাসিরা জুড়ে রয়েছে। শহরের আনাচে-কানাচে যার নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে। সেই ইতিহাসকে ধরে রাখতে এবং পর্যটন মানচিত্রে চন্দননগরকে উঁচুতে তুলে ধরতে ফরাসি দেশের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সোমবার চন্দননগরের নানা এলাকা ঘুরে দেখলেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন দিল্লিতে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জিগলার, কলকাতায় ফরাসি দূত স্টেফান আমালি, বাত্রা দাহারকিং ও দ্যামিয়া ফিয়াদ।
শুধু ইতিহাস নয়, প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে জড়িত নাগরিক পরিষেবার নানা ব্যবস্থাও সেই আমল থেকে ফরাসিদের সৌজন্যেই পেয়ে এসেছে এই শহর। এ দিন শহরে ফরাসিদের বিভিন্ন সৌধগুলি ঘুরে দেখেন দিল্লির এবং কলকাতার ফরাসি রাষ্ট্রদূতরা। সৌধগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন।
কলকাতার চৌহদ্দির বাইরে রাজ্যে এখানেই প্রথম ফুটপাথ আর গ্যাসের আলো দেখেছিলেন মানুষ। এই শহরের ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলা ফ্রেঞ্চ মিউজিয়াম, গির্জা, স্ট্র্যান্ড ঘাট, গভর্নমেন্ট কলেজ, থানা—সবই সেই সময়ে তৈরি। তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ডুপ্লের আমলে চন্দননগর ঘিরে গড় বা পরিখা তৈরি করা হয়। যার অস্তিত্ব আজও রয়েছে। ভদ্রেশ্বর পেরিয়ে শহরের প্রবেশপথে সুদৃশ্য তোরণটিও ফরাসিদের তৈরি। এই সমস্ত টুকরো টুকরো ইতিহাসকে উন্নততর প্রযুক্তির মাধ্যমে কী ভাবে অটুট রাখা যায়, তা খতিয়ে দেখতেই এ দিন হাজির হয়েছিলেন ফরাসি প্রতিনিধিরা। চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পর্যটনের ক্ষেত্রে যে সব সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলিকে আরও বাস্তবায়িত করার প্রশ্নে সরকারি বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শহরের পর্যটন প্রসারে উৎসাহী।’’ পর্যটনের পাশাপাশি শহরে ফরাসি ভাষায় শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। চন্দননগরই রাজ্যের একমাত্র শহর, যেখানে সরকারি এবং পুরসভা পরিচালিত স্কুলে ফরাসি পঠনপাঠনের রেওয়াজ আছে। আগামী প্রজন্ম যাতে ফরাসি ভাষার পড়াশোনায় আগ্রহী হয়, সেই ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছেন ফরাসি প্রতিনিধিরা।