Advertisement
E-Paper

প্রকাশ্যে সুখটান, গচ্চা ২০০ টাকা, গ্রামীণ হাওড়ায় জরিমানার ধূম পুলিশের

সে দিন বাগনান বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস ছাড়তে দেরি দেখে সবে সিগারেটে প্রথম সুখটান দিয়েছেন। হঠাৎ সামনে পুলিশ!

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
সাবধান: ধরা প়ড়লে হতে পারে মোটা জরিমানা। নিজস্ব চিত্র

সাবধান: ধরা প়ড়লে হতে পারে মোটা জরিমানা। নিজস্ব চিত্র

থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন প্রৌঢ়!

সে দিন বাগনান বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস ছাড়তে দেরি দেখে সবে সিগারেটে প্রথম সুখটান দিয়েছেন। হঠাৎ সামনে পুলিশ!

‘‘এখানে সিগারেট ধরিয়েছেন কেন? বারণ জানেন না?’’— পুলিশকর্মীর কড়া চাহনিতে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না প্রৌঢ়। সিগারেট ফেলে দিলেন। সুখটান দেওয়া গেল। আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলেন, ‘‘মানে, আমি তো প্রায়ই..।’’

কথা শেষ করতে দিলেন না পুলিশকর্মী। ‘চালান’ কেটে প্রৌঢ়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন। দু’টি একশো টাকার নোট পকেট থেকে বের করে দিয়ে বাস ধরলেন প্রৌঢ়।

ছবিটা বাগনান বাসস্ট্যান্ডের হলেও একই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে উলুবেড়িয়া, আমতা, জগৎবল্লভপুর-সহ গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায়। ছ’মাস ধরে প্রকাশ্য ধূমপানে কড়া নজরদারি এবং জরিমানার (২০০ টাকা) দাওয়াই প্রয়োগ করছে জেলা পুলিশ। তাতে ফলও মিলছে বলে জেলা পুলিশের দাবি। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘প্রকাশ্য ধূমপানের জন্য আমরা গত ছ’মাসে জরিমানা বাবদ বেশ কয়েক হাজার টাকা আদায় করেছি। এ নিয়ে প্রচারও চলছে। প্রকাশ্যে ধূমপান বরদাস্ত করা হবে না। প্রবণতাটা কমছে।’’

জুন মাসের গোড়া থেকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যখন প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হচ্ছিল, তখন ধূমপায়ীদের অনেকেই মনে করেছিলেন, দু’দিন বাদে পুলিশের নজরদারির জোর কমে যাবে। যেমনটা হয়েছে ‘হেলমেট ছাড়া পেট্রল পাম্পে তেল নয়’-এর ক্ষেত্রে। পুলিশ জানিয়েছিল, স্কুল-কলেজের ১০০ মিটারের মধ্যেও কোনও রকম তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা যাবে না। বাসস্ট্যান্ড, বাজার-সহ জনবহুল স্থানে প্রকাশ্যে ধূমপান তো নয়ই। এ নিয়ে মাইকে প্রচারও হয়।

কেউ ভাবেননি পুলিশ এত কড়া হবে! সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা বিড়ি ধরানোর জন্য ২০০ টাকা গচ্চা দিতে আর কারই বা ভাল লাগে! ফলে, রাস্তাঘাটে ধূমপায়ীদের আতঙ্ক বেড়েছে। পুলিশের উদ্যোগে বিড়ি-সিগারেট কেনা যে কমছে, মানছেন একাধিক বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতা। তাঁদের মধ্যে উলুবেড়িয়ার তপন অধিকারী বলেন, ‘‘মাসছয়েক আগে দিনে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকার বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করতাম। এখন অনেকটাই কমেছে।’’ পাঁচলার এক বিক্রেতা বলেন, ‘‘বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ায় অনেকেই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পুলিশের জন্য সংখ্যাটা আরও কমছে।’’

জেলা জুড়ে এই অভিযানকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন। বাগনানের ব্যবসায়ী পরিতোষ ধাড়া বলেন, ‘‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, সবাই জানেন। সরকার যদি সিগারেট-বিড়ি তৈরির কারখানাগুলিই বন্ধ করে দেয়, সবচেয়ে ভাল হয়। তবু পুলিশ যে এগিয়ে এসেছে, এটা ভাল।’’ বাগনানের চিকিৎসক অনুপ মঙ্গল বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ দেখে ভাল লাগছে। এটা যেন বজায় থাকে।’’

তবু এখনও প্রকাশ্যে বিড়ি-সিগারেট খাওয়া গ্রামীণ হাওড়ায় পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। রাস্তায় আশপাশে উর্দিধারী কাউকে না-দেখলেই জ্বলে উঠছে বিড়ি-সিগারেট। তবে এক ধূমপায়ী সিগারেট খাওয়ার জন্য আলাদা ‘জোন’-এর দাবি তোলায় ধমক খেয়েছেন তাঁর দাদুর কাছেই। এটাই বা কম কী! বলছেন এক পুলিশকর্তা।

Smoking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy