Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খিচুড়ি বিলিতে সন্ন্যাসীর সঙ্গে সামিল জাহিররা

সোমবার দুপুরে এই দৃশ্যই দেখা গেল বন্যাদুর্গত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের জঙ্গলপাড়ায়। রবিবার দুপুরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছন সেখানে। বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেন তাঁরা।

সহায়: ত্রাণের জন্য তৈরি হচ্ছে খিচুড়ি। ছবি: সুব্রত জানা

সহায়: ত্রাণের জন্য তৈরি হচ্ছে খিচুড়ি। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার ও শান্তনু ঘোষ
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

এক জনের পরনে গেরুয়া বসন। নাম স্বামী সুরেশানন্দ। অন্য জনের মাথায় ফেজ টুপি। নাম জাহির হোসেন। বিশাল কড়াই থেকে নামানো হল খিচুড়ি। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের গেরুয়াধারী ওই সন্ন্যাসী সেই খিচুড়ির বালতি জাহিরের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “এ বার আমি নিশ্চিন্ত। সকলের কাছে খিচুড়ি পৌঁছে যাবে। জাহির বড় ভরসা।”

সোমবার দুপুরে এই দৃশ্যই দেখা গেল বন্যাদুর্গত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের জঙ্গলপাড়ায়। রবিবার দুপুরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছন সেখানে। বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেন তাঁরা। এত জন মানুষের জন্য রান্না ও বণ্টন করা বেশ জটিল ব্যাপার। লোকবল বাড়ানোর জন্য আশ্রমের পক্ষ থেকে এলাকার বিধায়ক সমীর পাঁজার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। সমীরবাবু যে ১৪ জন যুবককে সন্ন্যাসীদের সাহায্য করার জন্য পাঠান, তাদের মধ্যেই ছিলেন জাহির। বিধায়কও বলেন, “জাহির খুব কাজের ছেলে।” এলাকাটা তেমন ভাবে চেনেন না সন্ন্যাসীরা। তবে জাহির আছেন তো! কাজেই তাঁরা নিশ্চিন্ত। ঠিক ঠিক জায়গায় খাবার পৌঁছে দেবেন তিনিই। বন্যার জলে ঠিক এ ভাবেই ধুয়ে মুছে গেল ধর্মের ভেদোভেদ। গরম খিচুড়ির বালতি নিয়ে বেরিয়ে পড়ার ঠিক আগে জহির বলেন, “বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের উপকার করতে এসেছেন এক দল সহৃদয় মানুষ। কাজটি যাতে ঠিকঠাক হয় সে জন্যই পাশে দাঁড়ানো। এটাই বড় কথা।”

জঙ্গলপুরে উদয়নারায়ণপুর বাস স্ট্যান্ডেই তৈরি হয়েছে সঙ্ঘের অস্থায়ী রান্নাঘর। সেখানে বড় কাঠের উনুনে বিশালকার কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে খিচুড়ি। রান্না হতেই ভ্যান রিকশায় করে তা পৌঁছে যায় বন্যাদুর্গতদের কাছে। আশ্রমের পক্ষ থেকে যে হলুদ কার্ড দেওয়া হয়েছে, সেটা দেখিয়েই খিচুড়ি সংগ্রহ করতে পারছেন বন্যা দুর্গতেরা। সোমবার অবশ্য উনুন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে। সাত হাজার মানুষকে খিচুড়ি খাওয়াতে পেরেছেন সন্ন্যাসীরা। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান সম্পাদক বিশ্বাত্মানন্দ বলেন, ‘‘রবিবার থেকে উদয়নারায়ণপুরের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে খিচুড়ি খাইয়েছি। তবে ভবানীপুর, সোনাতলা, হরালী-সহ যে সব এলাকায় জল নামেনি, সেখানে নৌকো করে খাবার নিয়ে যাচ্ছি।’’ সঙ্ঘের স্বামী ভূদেবানন্দ, স্বামী নিত্যানন্দদের সঙ্গেই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন স্থানীয় আলম মল্লিক, বাবলু মল্লিকেরা। কেউ দেখেছেন রান্নার ব্যবস্থাপনা, কেউ লক্ষ রাখছেন বন্যাদুর্গত মানুষেরা অভুক্ত না থাকেন। জাহিরদের নিয়ে সন্ন্যাসীরা পৌঁছে যান জঙ্গলপুরের মুসলমান পাড়ায়। পরে তাঁরা পৌঁছে যান পার্শ্ববর্তী টোকাপুরে হিন্দু মহল্লাতেও। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে খাওয়াদাওয়া সারেন।

বন্যার অন্ধকারের মধ্যে যেন এক টুকরো আলোর ঝলকানি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Relief Camp Hindu Communal Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE