Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীকে গঙ্গার ঘাটে ফেলে গেলেন স্ত্রী!

পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ার রামেশ্বর মালিয়া লেনের একটি হোটেলে দীর্ঘ দিন ধরে রান্নার কাজ করেছেন কৃষ্ণ। আদতে বাড়ি বিহারে হলেও তাঁর বিয়ে হয়েছিল নন্দীগ্রামের বৃন্দাবন চকের বাসিন্দা গৌরী যাদবের সঙ্গে।

এ ভাবেই গঙ্গার ঘাটে পড়েছিলেন কৃষ্ণ যাদব। সোমবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

এ ভাবেই গঙ্গার ঘাটে পড়েছিলেন কৃষ্ণ যাদব। সোমবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

পরিবার পরিত্যক্ত হয়েছিলেন আগেই। জীবনধারণের জন্য যে হোটেলে রান্নার কাজ করতেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পরে সেখান থেকেও বিতাড়িত করা হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী তাঁকে রেখে দিয়ে যান রামকৃষ্ণপুর গঙ্গার ঘাটে একটি সিমেন্টের বেঞ্চে। গত পাঁচ মাস ধরে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছিলেন কৃষ্ণ যাদব নামে ওই প্রৌঢ়। শেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে পুলিশ এসে তাঁকে ভর্তি করল হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ওই প্রৌঢ়ের অভিযোগ, ‘‘স্ত্রী-মেয়ে আমাকে দেখেনি। দেখলে এমন অবস্থা হতো না।’’

পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ার রামেশ্বর মালিয়া লেনের একটি হোটেলে দীর্ঘ দিন ধরে রান্নার কাজ করেছেন কৃষ্ণ। আদতে বাড়ি বিহারে হলেও তাঁর বিয়ে হয়েছিল নন্দীগ্রামের বৃন্দাবন চকের বাসিন্দা গৌরী যাদবের সঙ্গে। ওই দম্পতির একটি মেয়ে আছে। বিয়ের পরে কিছু দিন ঘরজামাই হয়ে কাটালেও শেষে পারিবারিক অশান্তির জন্য কৃষ্ণ কাজের সন্ধানে হাওড়ায় চলে আসেন। স্ত্রী গৌরী ভবানীপুরে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেন। পুলিশ জানায়, রামেশ্বর মালিয়া লেনের হোটেলে কাজ করার সময়েই পক্ষাঘাতে শরীরের বাঁ দিক অবশ হয়ে যায় কৃষ্ণর। তাঁর কাজও চলে যায়। শেষে স্বামীকে নিয়ে নন্দীগ্রামে ফিরে যান গৌরী।

গৌরীর অবশ্য দাবি, স্বামীর রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে তাঁর বাপেরবাড়ির ভিটে চড়া সুদে বন্ধক দিতে হয়েছিল। তখন থেকেই সংসারে অভাব আরও তীব্র হয়। তিনি বলেন, ‘‘এমন অভাবের মধ্যেও নেশার টাকা না জোগাড় করতে না পারলে আমাকে আর মেয়েকে মারধর করত কৃষ্ণ। এক জন বলেছিল, গঙ্গামাটি মাখালে পক্ষাঘাত সেরে যাবে। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে গঙ্গার ঘাটে রেখে দিয়ে আসি।’’

গৌরী আরও দাবি করেছেন, মাসে এক বার করে এসে তিনি স্বামীকে কিছু ওষুধ, টাকা আর খাবার দিয়ে যেতেন। তা ছাড়া একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাঁরাই ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে রোজ খাবার দিয়ে যেতেন। সোমবার ওই প্রৌঢ়ের কাহিনি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা হাওড়া সিটি পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়েই পুলিশের কিরণ অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর দেওয়া হয়েছে কৃষ্ণের স্ত্রীকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Homeless man Homeless Howrah District Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE