Advertisement
E-Paper

ফুলেশ্বরে অবাধে বিকোচ্ছে দেশি মদ

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বৃদ্ধ ওই মাঠে দাঁড়িয়ে খোলাখুলি দেশি মদ  বিক্রি করছিলেন। একটি বড় জারিকেনে মদ ভরা ছিল।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৮
নজর-নেই: সেচ বাংলো সংলগ্ন জমিতে চড়ুইভাতির সময়ে চলছে প্রকাশ্যে মদ্যপান।

নজর-নেই: সেচ বাংলো সংলগ্ন জমিতে চড়ুইভাতির সময়ে চলছে প্রকাশ্যে মদ্যপান।

গঙ্গার ধারে ফুলেশ্বর সেচ বাংলো সংলগ্ন ফাঁকা জমিটি আসলে মদ্যপান করার উপযুক্ত জায়গা! এমনই দাবি করছেন স্থানীয় মদ বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বৃদ্ধ ওই মাঠে দাঁড়িয়ে খোলাখুলি দেশি মদ বিক্রি করছিলেন। একটি বড় জারিকেনে মদ ভরা ছিল। চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজন তাঁর কাছে এসে বোতল দিয়ে দিচ্ছেন। জার থেকে মদ তুলে বোতলে ভরে দিচ্ছেন তিনি। দাম বোতল পিছু ১০০ টাকা। এইভাবে খোলাখুলি মদ বিক্রি করলে পুলিশ এসে ধরবে না? লুঙ্গি ও ফুলশার্ট পরিহিত বৃদ্ধের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘দূর মশাই পুলিশ আসবে কেন! সবাই জানে এখানে লোকে মদ্যপান করতেই আসে।’’ শুধু মদ নয়, সঙ্গে খাওয়ার জন্য ভ্যান রিকশায় করে আনুষঙ্গিক খাবারও বিক্রি করছেন তিনি।

ফুলেশ্বরে বহু মানুষ চড়ুইভাতি করতে আসেন। হাওড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গড়চুমুক, কোলাঘাট, গাদিয়াড়ার সঙ্গে চড়ুইভাতি করার জায়গা হিসাবে ফুলেশ্বরের নামও একসঙ্গে উচ্চারিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এখানে চড়ুইভাতি করতে এলে সেচ দফতরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই এখানে চড়ুইভাতির মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরেও বহু মানুষ এখানে চড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন।

মাঠে জমে রয়েছে আবর্জনা। ছবি: সুব্রত জানা

এ দিন ওই মাঠে ঘুরে দেখা গেল, বেশিরভাগ জায়গাতেই এক দিকে রান্নার আয়োজন চলছে, অন্য দিকে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নানা বয়সের পুরুষ বসে মদ্যপান করছেন। কোনও আড়াল আবডাল নয়, খোলাখুলি মাঠে শতরঞ্জি পেতেই মদ্যপান চলছে। ‘‘প্রকাশ্য মদ্যপান করছেন কেন?’’— এই প্রশ্নের উত্তরে জবাব এসেছে, ‘‘অনেকেই তো করছেন। আমরাই বা বাদ থাকি না?’’

শুধু মদ্যপান নয়, সুযোগ আছে নৌকাবিহারেরও। নদীর পাড়ে লাগানো রয়েছে মাছ ধরার নৌকা। মাছ ধরা ছেড়ে মাঝিরা এখন ব্যস্ত নৌকাবিহার করাচ্ছেন। মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জন প্রতি কুড়ি টাকা করে দিলে আধ ঘণ্টার জন্য গঙ্গায় নৌকায় চেপে ঘোরানো হচ্ছে। তবে অন্তত ৬ জন যাত্রী হলে তবেই নৌকা এগোবে। যাত্রী নিয়ে নৌকা চলে যাচ্ছে মাঝ গঙ্গা পর্যন্ত। যাত্রীদের ভারে সেই নৌকা টলমল করছে। লাইফ জ্যাকেটের তো কোনও বালাই নেই। পুলিশ কিছু বলে না? কয়েকজন মাঝি জানান, পুলিশ আসে শুধুমাত্র রবিবার। কয়েক মিনিট থেকেই চলে যায়। সেই সময়টুকু তাঁরা নৌকা বন্ধ রাখেন।

শুধু বেআইনি নৌকাবিহার এবং প্রকাশ্যে মদ্যপানই নয়, ফুলেশ্বরের মাঠটি এখন ভরে গিয়েছে আবর্জনায়। বড়দিনে যাঁরা চড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন তাঁদের ফেলে যাওয়া থার্মোকলের থালা এবং বাটি যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। সেচ দফতরের পক্ষ থেকে বর্জ্য ফেলার একটি কংক্রিটের ভ্যাট করা হয়েছে। সেটি থেকে আবর্জনা উপচে যাচ্ছে। কিন্তু সাফাই করা হয়নি। আবর্জনা গঙ্গাতেই ফেলা হচ্ছে। জগদীশচন্দ্র বসুর নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধের গোড়া ঢেকে গিয়েছে আবর্জনায়।

যাদের থেকে অনুমতি নিয়ে চড়ুইভাতি করতে হয় সেই সেচ দফতরের উলুবেড়িয়া সাব ডিভিশনের কর্তাদের অবশ্য দাবি, তাঁরা নিয়মিত মাঠ সাফাই করেন। বেআইনি নৌকাবিহার এবং প্রকাশ্য মদ্যপানের বিষয়ে তাঁদের দাবি, এগুলি পুলিশের দেখার বিষয়।

সাফাইয়ের নমুনা অবশ্য এ দিনই দেখা গিয়েছে। লুঙ্গি ও ফুলহাতা গেঞ্জি পরা এক যুবক বাংলোর পাঁচিলের গোড়া থেকে আগাছা তুলছিলেন ও ফেলে যাওয়া মদের বোতল সরাচ্ছিলেন। নিজেকে সেচ দফতরের অধীন ঠিকা সংস্থার কর্মী বলে দাবি করে ওই যুবক জানালেন, তিনি নিয়মিত বর্জ্য সাফ করেন না। সেচ দফতর সূত্রে জানা গেল, দফতরের বড় কর্তার সেচ বাংলোতে আসার কথা। তাই এই সাফাই। না হলে এইটুকুও হতো না। সব শোনার পরেও হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা আবার দাবি করলেন, ‘‘ওই মাঠে টহলদারিতে কোনও ফাঁক নেই।’’

Alcohol Hooch Picnic Fuleswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy