Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চন্দ্রকান্তর সাফল্য দেখতে রাত জাগল হুগলি

গত কয়েক দিন ধরেই অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন গৃহকর্তা মধুসূদন কুমার এবং তাঁর স্ত্রী অসীমাদেবী। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে কার্যত গোটা দেশ জেনে গিয়েছে যে, চন্দ্রযানের অ্যান্টেনা তৈরিতে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁদের বড় ছেলে চন্দ্রকান্তের।

কৃতী: চন্দ্রকান্ত কুমার

কৃতী: চন্দ্রকান্ত কুমার

প্রকাশ পাল
গুড়াপ শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share: Save:

ব্যবধানটা সাতচল্লিশ দিনের। গত ২২ জুলাই সুদুর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-২ পাড়ি দিয়েছিল মহাকাশে। সাতচল্লিশ দিন পরে চাদের মাটিতে সে অবতরণ করছে। এই দেড় মাসে হুগলির গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি পঞ্চায়েতের কুমারবাড়িতে ক্রমশই উর্ধ্বমুখী হয়েছে অপেক্ষার পারদ। সঙ্গে রয়েছে উদ্বেগও। একই উদ্বেগ নিয়ে শুক্রবার রাতে জেলার ছেলের সাফল্যের দিকে চোখ রেখেছিল গোটা হুগলি।

গত কয়েক দিন ধরেই অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন গৃহকর্তা মধুসূদন কুমার এবং তাঁর স্ত্রী অসীমাদেবী। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে কার্যত গোটা দেশ জেনে গিয়েছে যে, চন্দ্রযানের অ্যান্টেনা তৈরিতে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁদের বড় ছেলে চন্দ্রকান্তের। অর্থাৎ এই মহাকাশযানের সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা এই বঙ্গসন্তানের।

প্রতি দিন তিন বেলা রেডিওর খবর শোনেন মধুসূদনবাবু। গত কয়েক দিনে কখন চন্দ্রযানের খবর আসে, সে দিকে কান পাতেন। শুক্রবার সকালেও রেডিও শুনেছেন। গোটা দেশ যে দিকে তাকিয়ে, সেই অভিযানের অন্যতম কাণ্ডারী তাঁর ছেলে, এই নিয়ে অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে দৃশ্যতই ঝলমল করে তাঁর চোখমুখ। বলেন, ‘‘বলে বোঝাতে পারব না কতটা
আনন্দ হচ্ছে।’’

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে এই মহাকাশযান। কোনও দেশ এর আগে পৌছতে পারেনি সেখানে। ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠ নিয়ে গবেষণার নয়া দিগন্ত খুলে যেতে পারে এই অভিযানে। মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘ল্যান্ডার নামার পরে রোভার ঠিকঠাক ভাবে নিজের কাজ শুরু করুক, এই প্রার্থনাই করি।’’

চন্দ্রযান যাতে সফল উৎক্ষেপন করে এবং ছেলের মঙ্গলকামনায় সকাল থেকেই ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেছেন অসীমাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘ঈশ্বরের কৃপায় ছেলে সফল হবেই। মহাকাশযানও চাঁদের মাটি থেকে তথ্য পাঠাতে পারবে, এ আমার বিশ্বাস।’’ তিনি বলেন, ‘‘ছেলের কোনও চাহিদা ছিল না। সংসারের দারিদ্র বুঝে ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল‌।’’ অসীমাদেবীরা জানান, ছেলে-বৌমা প্রতিদিন ফোন করেন। এ দিন সকালেও কথা হয়েছে। তবে চন্দ্রযান প্রসঙ্গে কোনও কথা হয়নি।

চন্দ্রকান্ত গ্রামে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি অনার্স, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ‘রেডিও ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স’ নিয়ে এমএসসি এবং এমটেক করেন। ২০০১ সালে ইসরোতে যোগ দেন। তাঁর উত্তরণের কাহিনী এবং বাবা-মায়ের কৃচ্ছসাধন এখন গ্রামবাসীদের মুখে মুখে ফেরে। চন্দ্রকান্তের ভাই শশীকান্তও ইসরোয় গবেষণা করেন।

মধুসূদনবাবু জানান, দুই ছেলের নামেই চাঁদ থাক‌লেও নামকরণের সময় তাঁরা ভাবেননি যে দু’জনেই মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হবেন। তিনি জানান, ছোটবেলায় বড় ছেলের নাম রেখেছিলেন সূর্যকান্ত। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সময় নাম বদলে চন্দ্রকান্ত করে দেন। বড় ছেলের সঙ্গে মিলিয়ে ছোট ছেলের নাম রাখেন শশীকান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ISRO Chandrayaan 2 Moon Landing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE