Advertisement
E-Paper

‘জীবিত’কে মৃত বলা হল কেন, তাণ্ডব হাসপাতালে

রোগীর চিকিৎসায় গাফিলতি বা পরিষেবা সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ উঠলেই বহিরাগত এক শ্রেণির মানুষ সেটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। তাদের একমাত্র লক্ষ্য রোগীর পরিজনদের সঙ্গে মিশে হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালানো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৭
ভাঙচুরের পরে। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ভাঙচুরের পরে। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

রোগীর চিকিৎসায় গাফিলতি বা পরিষেবা সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ উঠলেই বহিরাগত এক শ্রেণির মানুষ সেটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। তাদের একমাত্র লক্ষ্য রোগীর পরিজনদের সঙ্গে মিশে হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালানো। পুজোর আগে এমনটাই ঘটেছিল কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে। এ বার সেই একই প্রমাণ মিলল হাওড়ার টি এল জায়সবাল হাসপাতালে।

হাওড়ার লিলুয়ার চকপাড়ার বাসিন্দা এক বছর আটেকের বালকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরে ওই সরকারি হাসপাতালে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় উন্মত্ত জনতা। ভাঙচুর করা হয় জরুরি বিভাগে রাখা যাবতীয় চিকিৎসা-সরঞ্জাম, স্ট্রেচার, ট্রলি। বাদ যায়নি চিকিৎসকদের ঘরে রাখা আসবাবপত্রও। এর পাশাপাশি ভেঙে দেওয়া হয় বহির্বিভাগের দরজা। হাসপাতালে কর্মীদের দিকেও তেড়ে যায় জনতা।

পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কে অন্য রোগীদের পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বরে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বেলুড় থানার পুলিশ। অভিযোগ, ভাঙচুর চলতে থাকে তাঁদের সামনেই।

তবে এলাকার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে একদল বহিরাগত এ ভাবে ভাঙচুর করছে দেখে এ দিন দর্শকের ভূমিকায় ছিল না পুলিশ। হামলাকারীদের রুখতে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় তারা। দফায় দফায় লাঠি চালিয়ে ফাঁকা করে দেওয়া হয় হাসপাতাল চত্বর। দু’জন হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কাচের টুকরো, ভেঙেচুরে যাওয়া ট্রলি, স্ট্রেচার-সহ নানা সরঞ্জাম। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ঘরে টেবিলে সাদা কাপড়ে ঢাকা এক বালকের মৃতদেহ। উল্টো দিকেই মেঝেতে পড়ে রয়েছে আলমারি। ভয়ার্ত মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীরা।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আখতার আলি বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে এর আগে অনেক বার বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে হামলা বা ভাঙচুর হয়নি। এক সময়ে মনে হচ্ছিল, ওরা আমাদেরও মারবে।’’ হাসপাতালের কর্মী ও চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, এ দিনের ভাঙচুর-বিক্ষোভের লিলুয়া, ঘুসুড়ি ও বেলুড়ের অনেক দুষ্কৃতী মিশে গিয়েছিল। তারাই মূলত গোলমাল পাকিয়েছে, ভাঙচুর চালিয়েছে।

কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ির সামনে এক বন্ধুর সঙ্গে খেলতে খেলতে পুকুরে পড়ে যায় চকপাড়ার মহাদেব কলোনির বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া তুহিন মজুমদার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুকুরে পড়েই তলিয়ে যায় ওই বালক। এলাকার এক যুবক তা দেখতে পেয়ে পুকুরে নেমে তুহিনকে উদ্ধার করেন। ওই বালকের আত্মীয়স্বজন ও পাড়ার লোকেরা মিলে তাকে জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যান।

ওই পাড়ার এক বাসিন্দা সুরজিৎ সরকার বলেন, ‘‘হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসক তুহিনকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর পরামর্শেই আমরা ওর দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর কয়েক ঘণ্টা পরে ফের ওই বালকের দেহ নিয়ে ফিরে আসেন তার বাড়ি ও পাড়ার লোকজন। তাঁরা দাবি তোলেন, বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে দেখা গিয়েছে, ছেলেটি বেঁচে আছে। চিকিৎসক ভাল ভাবে পরীক্ষা না করেই তাকে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। তুহিনের জেঠিমা মামণি মজুমদারের কথায়, ‘‘আমি নিজে দেখেছি ওর নিশ্বাস পড়ছে। চোখ নড়ছে। তাই তো ফের হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মীয়েরা ফের ওই বালককে হাসপাতালে ফিরিয়ে আনলে তাকে পরীক্ষা করে দেখেন জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক লতিফিয়া দাস। তিনি পরীক্ষা করে ফের ঘোষণা করেন, অনেক আগেই মারা গিয়েছে তুহিন।

হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ জানান, ওই বালককে মৃত ঘোষণা করার পরেই আচমকা কয়েকশো লোক হুড়মুড়িয়ে হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। তার পরেই ভাঙচুর, তাণ্ডব শুরু। পরে পুলিশ এসে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ দিকে এই ঘটনার পরেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ে এ দিনই রিপোর্ট দিতে বলা হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ভবানী দাস বলেন, ‘‘প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরেই তা রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বালকটিকে মৃত ঘোষণার করার পরে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেননি, তাই কর্তব্যে অবহেলার জন্য ওই চিকিৎসককে শো-কজ করা হয়েছে।’’

Hospital rampage Patient Doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy