Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

জলাশয় সংস্কারে উদ্যোগী হাওড়া

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো’ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দফতরের মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী জানান, এই কাজের জন্য কোনও ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করেনি পুরসভা।

পরিবর্তন: বালির গোস্বামীপাড়ার একটি পুকুর। নিজস্ব চিত্র

পরিবর্তন: বালির গোস্বামীপাড়ার একটি পুকুর। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

জমা জলের যন্ত্রণা থেকে শহরকে মুক্তি দিতে শুধু নিকাশি নালা সংস্কার বা তৈরিই নয়। বরং আগাছার জঙ্গলে বুজে ও মজে যাওয়া পুকুর খুঁড়ে তার জল ধারণের ক্ষমতা বাড়ানোর পথে হাঁটতে শুরু করেছে হাওড়া পুরসভা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের আওতায় হাওড়া পুরসভার এমন উদ্যোগ অভিনব বলেই দাবি পুরকর্তাদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৫ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গোটা হাওড়া শহরের পুকুর, ঝিল মিলিয়ে ২০০টির বেশি জলাশয়কে তার নিজের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ কাজে ওই সমস্ত জলাশয় বা ঝিলের মালিকানার কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গোটা শহরটায় পুকুরগুলিই এক একটা রোগের আঁতুড় ঘর। তাই তার মালিকানা নেওয়াটা লক্ষ্য নয়। বরং সেটাকে সংস্কার করে এলাকায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো’ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দফতরের মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী জানান, এই কাজের জন্য কোনও ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করেনি পুরসভা। বরং নিজেদের হাতে দায়িত্ব রেখে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৪০ জন যুবককে কাজে লাগানো হয়েছে। তাতে এক দিকে যেমন কাজের তদারকিকে সুবিধা হয়েছে, তেমনই ওই বেকার যুবকদের কর্ম সংস্থান হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে এটাই প্রথম পুরসভা, যারা চারটি দল তৈরি করে এই প্রকল্পের কাজটা করছে। আগামী দিনে আরও পুকুর সংস্কার করা হবে।’’

অরুণবাবুর দাবি, প্রতিটি এলাকাতেই পুকুর বা ঝিল বর্ষায় জলাধার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে সেগুলির জল ধারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়ে উল্টে এলাকা ভাসছিল। তাতে বর্ষায় এলাকা যেমন জলমগ্ন হচ্ছিল তেমনি আগাছার জঙ্গলে ভরে থাকা পুকুর থেকে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছিল। তাঁর দাবি, পুকুরগুলি সংস্কার হওয়ায় সেই যন্ত্রণা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলেছে নগরবাসীর। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘চিরকালই পুকুর সংস্কার করে তার জল ধারণের ক্ষমতা বাড়ানোর কাজটাকে জরুরি বলে মনে করা হয়। কারণ পুকুর বর্ষার জলকে ধরে রাখে। হাওড়া পুরসভার এই কাজ সম্পর্কে যা শুনলাম তা যথেষ্ট ইতিবাচক।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই সমস্ত কাউন্সিলরকে তাঁর এলাকায় দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়া পুকুরের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কাউন্সিলরদের থেকে সেই তালিকা পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয়তা বিচার করে বালি, বেলুড়, লিলুয়া, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ হাওড়ার ৬৬টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পুকুর সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়। কী ভাবে সংস্কার করা হচ্ছে? দফতর সূত্রের খবর, পুকুরের আগাছার জঙ্গল সাফ করে পানা তুলে জল পরিশোধন করা হচ্ছে। তার পরে প্রয়োজন থাকলে শাল খুঁটি দিয়ে চারপাশ বাঁধিয়ে দেওয়াও হচ্ছে।

শুধু তাই নয়। ‘জল ধরো জল ভরো’ দফতরের এই কাজের পরে এলাকায় সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য একই রকম ভাবে মালিকানার কোনও পরিবর্তন না করে সাজিয়ে তোলার কাজও শুরু করেছে পুরসভার পার্ক ও গার্ডেন দফতর। মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা বলেন, ‘‘পুকুর সংস্কারের পরে তার চার পাশের জায়গাটাও ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
কিন্তু নাগরিকদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাই পুরসভা থেকে জায়গাটা সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ বিভাসবাবু জানান, প্রয়োজন মতো পুকুরের চারপাশ দিয়ে হাঁটার রাস্তা, আলো, বসার জায়গা ও শিশুদের খেলার জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০টি মতো পুকুরের চারপাশ সাজানো হয়েছে।

মেয়রের কথায়, ‘‘নরক হাওড়া থেকে খোলা বাতাসের সুন্দর হাওড়া উপহার দেওয়াটাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Municipality Ponds Reformation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE