Advertisement
E-Paper

বর্জ্য থেকে সার তৈরি করবে হাওড়া পুরসভা

হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে পাহাড়প্রমাণ জঞ্জাল জমে যাওয়ায় যে কোনও সময়ে বড়সড় ধস নামার আশঙ্কা করছেন পুর কর্তারা। দীর্ঘদিনের জমে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত বেলগাছিয়া, ভট্টনগর, লিলুয়া, বামুনগাছি এলাকার বাসিন্দাদের।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৩
হাওড়া পুরসভা। ফাইল চিত্র।

হাওড়া পুরসভা। ফাইল চিত্র।

কেরলের আলেপ্পি পুরসভার ধাঁচে জঞ্জাল সমস্যা মেটাতে এ বার ‘এরোবিক কম্পোস্টিং’-এর মাধ্যমে সার তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে হাওড়া পুরসভা। কাগজকুড়ানি ও নিকাশির কাজে যুক্ত পরিবারগুলির যুবকদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে তাঁদের আয়ের পথ প্রশস্ত করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এর জন্য শিবপুরের একটি বহুতল আবাসনকে মডেল হিসেবে ধরে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে পাহাড়প্রমাণ জঞ্জাল জমে যাওয়ায় যে কোনও সময়ে বড়সড় ধস নামার আশঙ্কা করছেন পুর কর্তারা। দীর্ঘদিনের জমে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত বেলগাছিয়া, ভট্টনগর, লিলুয়া, বামুনগাছি এলাকার বাসিন্দাদের। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় সেখানে দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পুরকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, কয়েক বছরের মধ্যে বিকল্প ভাগাড়ের ব্যবস্থা না করলে শহরের আবর্জনা ফেলার কোনও জায়গা থাকবে না।

মূলত এই আশঙ্কা থেকেই শুরু হয় জঞ্জাল থেকে মুক্তির পথ বার করার চিন্তা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া শহরে রয়েছে একাধিক বহুতল আবাসন। সব মিলিয়ে রয়েছে প্রায় এক হাজার ফ্ল্যাট। সেখানে বসবাসকারীর সংখ্যা তিন থেকে চার হাজার। পুরসভার বক্তব্য, শিবপুরের এমনই একটি ফ্ল্যাটে সমীক্ষা চালিয়ে জানা গিয়েছে, ওই সব আবাসনে ফ্ল্যাটপিছু রোজ দেড় কেজি বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সেই হিসেবে ওই বহুতল আবাসনগুলিতে দিনে দেড় হাজার কেজি বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ১ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে দেড় হাজার কেজি বর্জ্য বেলগাছিয়া ভাগাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পুরসভার রোজ খরচ হয় দেড় হাজার টাকা। অঙ্কের হিসেবে সারা বছরে শুধুমাত্র পরিবহণ খরচই পড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। পরিবার পিছু প্রতিদিন যে দেড় কেজি বর্জ্য পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রাকৃতিক বর্জ্য বা বায়ো-ডিগ্রেডেবেল ওয়েস্টের পরিমাণ এক কেজি।

পুরকর্তাদের বক্তব্য, এই বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক বর্জ্যের ভার আর নিতে পারছে না বেলগাছিয়া ভাগাড়। অথচ সুষ্ঠু, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই দূষণ রোধ করা যায়। পাশাপাশি, এই মডেলের মাধ্যমে হবে কর্মসংস্থানও। বহুতল আবাসনগুলির মধ্যে পড়ে থাকা অব্যবহৃত জায়গার সামান্য অংশে ‘এরোবিক কম্পোস্টিং’-এর মাধ্যমে, নামমাত্র খরচের বিনিময়ে এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য সহজেই ব্যবহারযোগ্য করে ফেলা যাবে।

হাওড়া পুরসভার প্রশাসক তথা পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, “হাওড়া পুরসভা এলাকার একটি বহুতল আবাসনকে প্রথমে মডেল করে প্রকল্পটি চালু হয়েছে। সফল হলে অন্যান্য বহুতল আবাসনেও করা হবে।” তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পে পুরসভাকে কোনও বিনিযোগ করতে হবে না। এটি একটি স্বনির্ভর প্রকল্প। প্রথমে এই কাজে ইচ্ছুক কাগজকুড়ানি ও পুরসভার নিকাশির কাজে যুক্ত পরিবারের বেকার ছেলেময়েদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবে হাওড়া পুরসভার বিশেষ দল। তাঁরাই সার তৈরি করবেন ও বিক্রি করবেন। প্রতিটি পরিবার তাঁদের বাড়ির বর্জ্য প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক হিসেবে ভাগ করে রাখবেন। অপ্রাকৃতিক বর্জ্য নিয়ে যাবে পুরসভা। এর জন্য মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেওয়া হবে। সফল হওয়ার পরে প্রশিক্ষিতরাই অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন এবং অন্য বহুতলগুলিতেও এই প্রকল্প শুরু করা হবে। হাওড়া পুরসভা বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি বহুজাতিক সংস্থার সাথে আলোচনা শুরু করেছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে সার তৈরি করতে দু’টি পরিবারের বর্জ্যের জন্যে প্রায় এক বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। সেই হিসেবে হাজারটি পরিবারের জন্য পাঁচশ থেকে ছ’শো বর্গফুট জমির প্রয়োজন।

Howrah Municipality Garbage Fertilizer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy