Advertisement
E-Paper

শিশুর পরিচয় জানা গেল না চার দিনেও

প্রায় সারা রাত রাস্তায় পড়ে থেকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দিয়েছিল শিশুটির। তাই পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
হাওড়া জেলা হাসপাতালে সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র।

হাওড়া জেলা হাসপাতালে সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু এখনও কোনও পরিচয় মেলেনি মাত্র ছ’দিন বয়সী শিশুটির। আর তাই মাথা ভর্তি কালো চুল, ফর্সা রঙের সদ্যোজাত পুত্রসন্তানটির আপাতত ঠিকানা— ‘হাওড়া জেলা হাসপাতাল’!

প্রায় সারা রাত রাস্তায় পড়ে থেকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দিয়েছিল শিশুটির। তাই পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা অবশ্য দাবি করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। তখন অবশ্য চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মাধ্যমে তার নতুন ঠিকানা হবে লিলুয়া হোম। কিন্তু এত ছোট শিশুর বাবা-মা কে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে লিলুয়া, বেলুড় জুড়ে। যদিও এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কিছুই জানতে পারেননি তদন্তকারীরা।

তবে গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে শিশুটিকে উদ্ধারের পরের দিনই বেলুড় বাজার এলাকা থেকে আরও দুই কিশোরীকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে তেরো বছরের এক জন অন্তঃসত্ত্বা। বছর পনেরোর আর এক কিশোরী পুলিশের কাছে দাবি করেছে, কয়েক দিন আগে সে মৃত সন্তান প্রসব করেছিল। তবে সত্যিই বাচ্চাটি মারা গিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রয়োজনে ওই কিশোরীর ডিএনএ টেস্ট করে উদ্ধার হওয়া শিশুটির সঙ্গে মেলানো হবে।

ওই দুই কিশোরীকে আপাতত লিলুয়া হোমে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, ফুটপাথবাসী ওই সব কিশোরীদের প্রতিনিয়ত টাকা ও খাবারের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক রিকশাচালক ঋষি সিংহকে। তার সঙ্গে আরও কয়েক জন জড়িত রয়েছে বলেও জেনেছেন তদন্তকারীরা। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘উদ্ধার হওয়া শিশুটি কার, তা এখনও নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি ঠিকই। তবে ওই দুই কিশোরী এবং ধৃত রিকশাচালকের মাধ্যমেও তার পরিচয় মিলতে পারে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, শিশুটির পরিচয় জানতে তাকে উদ্ধারের পরে পুলিশের মতোই কাজে নেমে পড়েছিলেন বেলুড়ের বাসিন্দা লিপি, মায়া, বিজয়লক্ষ্মীর মতো কয়েক জন মহিলা। বুধবার তাঁরা জানান, বেলুড় বাজারে জিটি রোডের উপরে রয়েছে একটি কালী মন্দির। সেখানেই মায়ের সঙ্গে ১৩ বছরের এক কিশোরী থাকে। নববর্ষের দিন সকালে দেখা যায়, সে অন্তঃসত্ত্বা। তা দেখে সন্দেহ হয় ওই মহিলা বাহিনীর। তাঁরা বিষয়টি জানান বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে। তাঁর পরামর্শ মতো কিশোরীকে মিষ্টি কিনে দেওয়ার নাম করে অন্য জায়গায় নিয়ে যান ওই মহিলারা। বারবার প্রশ্ন করার পরে জানা যায়, দিনের পর দিন ধরে ঋষি-সহ আরও কয়েক জন বেলুড় বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় থাকা কিশোরীদের ঝোপে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করত। বছর তেরোর মেয়েটি দাবি করে, তাঁর সঙ্গেও এমন ঘটেছে। যার ফলে সে এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

এর পরে বৈশালীদেবী ওই কিশোরীর মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনিও অভিযোগ করেন, মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ঋষি কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়। বিধায়ক বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে ঋষি জানিয়েছিল, বাচ্চা জন্মানোর পরে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দেবে আর বাচ্চাটি সাত লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে। এর পিছনে বড় কোনও চক্র কাজ করছে। এর বিহিত হওয়া দরকার।’’ পুলিশ জানায়, এর পরেই বেলুড়ের টিফিন বাজার থেকে ধরা হয় ঋষিকে। পাশাপাশি ওই এলাকা থেকেই উদ্ধার করা হয় ১৫ বছরের আর এক কিশোরীকে।

বৈশালীদেবী জানান, হাওড়া হাসপাতাল থেকে আসার পরে কী ভাবে ওই শিশুটিকে লিলুয়া হোমে রাখা হবে, তার জন্য হোম এলাকার টিএল জায়সবাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আর নতুন বছরের শুরুতে উদ্ধার হয়েছে বলে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘নবীন’।

new born baby Identity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy