Advertisement
E-Paper

হাওড়ার দুই ঘিঞ্জি এলাকায় অস্ত্র কারখানা

গত বছর হাওড়ারই বেলিলিয়াস রোডের কাছে গঙ্গারাম বৈরাগী লেনে সন্ধান মিলেছিল একটি বড়সড় অস্ত্র তৈরির কারখানার। উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর অস্ত্র ও অস্ত্রের যন্ত্রাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০১:১৯
 বাজেয়াপ্ত: উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের খোল।

বাজেয়াপ্ত: উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের খোল।

কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় যে ঘাঁটি গেড়েছে মুঙ্গেরের অস্ত্র ব্যবসায়ীরা, ফের তার প্রমাণ মিলল। কয়েক দিন আগে হাওড়ার পিলখানায় যে জায়গায় দু’পক্ষের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াই হয়েছিল, ঠিক তার পাশেই একটি বহুতল থেকে শুক্রবার সকালে ফের মিলল একটি অস্ত্র কারখানার হদিস। বিকেলে হাওড়ার ফজিরবাজারে আরও একটি অস্ত্র কারখানায় হানা দিয়ে উদ্ধার হয় ২০টি অস্ত্র। ভোটের পরেই দু’টি অস্ত্র কারখানার হদিস মেলায় তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা।

গত বছর হাওড়ারই বেলিলিয়াস রোডের কাছে গঙ্গারাম বৈরাগী লেনে সন্ধান মিলেছিল একটি বড়সড় অস্ত্র তৈরির কারখানার। উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর অস্ত্র ও অস্ত্রের যন্ত্রাংশ। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের জাল নোট দমন শাখা কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোড থেকে তিন জন জাল নোট ও অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় ২২টি অসম্পূর্ণ দেশি পিস্তল ও ৫০টি জাল দু’হাজার টাকার নোট। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্ধান মেলে হাওড়ার ওই লেদ মেশিন কারখানার আড়ালে চলা অস্ত্র কারখানার। এর পরেই কলকাতার স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স ও গোলাবাড়ি থানা যৌথ ভাবে হানা দিয়ে শুক্রবার ভোরে ওই অস্ত্র কারখানা থেকে উদ্ধার করে ২৬টি অসম্পূর্ণ দেশি ৭ এমএম পিস্তল-সহ প্রচুর অস্ত্রের যন্ত্রাংশ ও একটি লেদ মেশিন। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় মহম্মদ চাঁদ ওরফে সোনু, মহম্মদ সুলতান এবং মহম্মদ সিল্টু নামে মুঙ্গেরের বাসিন্দা তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘনবসতিপূর্ণ পিলখানায় ৪১৮ ও ৪১৮/১ নম্বর জিটি রোডে পাঁচতলা বাড়িটির একতলার পিছন দিকে সাত বছর আগে ঘরটি ভাড়া নেন হাওড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ রুস্তমের ভাগ্নে শেখ শাহনাজ রহমতুল্লা। বছর তিনেক আগে তিনি আবার সেটি কারখানা করার জন্য মাসে মাত্র ২৭৫ টাকায় ভাড়া দেন মুঙ্গেরের বাসিন্দা মহম্মদ চাঁদকে। পুলিশ জানায়, বাইরে থেকে কারখানাটি হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডের আরও পাঁচটি লেদ কারখানার মতোই দেখতে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জিটি রোডের পাশে পাঁচতলা বাড়িটির সামনে উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়। বাড়ির পিছন দিকে প্রায়ান্ধকার অলিগলি পেরিয়ে ওই লেদ কারখানা। বেশ ভেবেচিন্তেই যে কারখানাটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, অবস্থান দেখলেই তা বোঝা যায়। বহুতলটি জিটি রোডের পাশে হলেও কারখানাটি একেবারেই লোকচক্ষুর আড়ালে। ওই কারখানার ঠিক উল্টোদিকে একটি শেরওয়ানির কারখানা। সেই কারখানার মালিক সাকিল খান বলেন, ‘‘বেআইনি কিছু চলছে বলে সন্দেহ হয়েছিল। এক দিন জল চাইতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ওই কারখানায় ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।’’

পুলিশ জানায়, বাড়িটির মালিক তারকনাথ সাউ বিজেপি-র উত্তর হাওড়া মণ্ডলের সভাপতি। সাত বছর আগে তিনি ওই ঘরটি শেখ শাহনাজকে ভাড়া দিয়েছিলেন। বছর তিনেক আগে শাহনাজ আবার সেটি অস্ত্র ব্যবসায়ী মহম্মদ চাঁদকে ভাড়া দেন। এলাকার বিজেপি নেতা তারকনাথবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আমি মহম্মদ চাঁদকে চিনি না, তাঁকে ভাড়াও দিইনি। শাহনাজ কাকে ফের বসিয়েছে, আমাকে জানায়নি।’’ এ বিষয়ে উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘বাড়ির মালিক বিজেপি-র উত্তর হাওড়ার মণ্ডল সভাপতি। তিনি ভোটের আগে রাজ্যে সন্ত্রাস কায়েম করার জন্য যে এই অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছিলেন, তা প্রমাণ হল।’’ এলাকার বাসিন্দা ও বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য উমেশ রাই বলেন, ‘‘ঘরটি তৃণমূল নেতার ভাগ্নে ভাড়া নিয়ে অস্ত্র ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ঘর ভাড়া দেওয়ার পিছনে তারকনাথবাবুর কোনও ভূমিকা নেই।’’

Illegal Weapon Howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy