Advertisement
E-Paper

নেই ডুবুরি, ওয়াচ টাওয়ার, নিরাপত্তায় নিধিরাম প্রশাসন

বিসর্জন নির্বিঘ্নে শেষ করতে গঙ্গার ঘাটগুলিতে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি হয়। ব্যবস্থা করা হয় পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশকর্মীর। মজুত রাখা হয় রিভার ট্রাফিক পুলিশ থেকে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৯
বিসর্জনের শোভাযাত্রা। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিসর্জনের শোভাযাত্রা। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিসর্জন নির্বিঘ্নে শেষ করতে গঙ্গার ঘাটগুলিতে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি হয়। ব্যবস্থা করা হয় পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশকর্মীর। মজুত রাখা হয় রিভার ট্রাফিক পুলিশ থেকে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। থাকে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের বিশেষ দ‌‌ল। কিন্তু কলকাতা লাগোয়া হুগলি জেলায় দুর্গার বিসর্জনে গঙ্গার ঘাটগুলিতে কার্যত সে সবের বালাই নেই। এ নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ পুজো কমিটিগুলির। তাঁদের অভিযোগ, জেলায় গঙ্গার ঘাটগুলিতে এ সবের পরিবর্তে শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেই নিরাপত্তার দায় সারে প্রশাসন।

অভিযোগ যে নেহাত মিথ্যা নয়, বৃহস্পতিবার রাতে তার প্রমাণও মিলেছে। প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে মারা যান দু’জন। পরে ডুবুরির ব্যবস্থা করে দেহ উদ্ধার করা হয়। পুজোর আগে মহালয়ায় তর্পণ করতে এসে শেওড়াফুলিতে নিস্তারিণী কালীবাড়ির কাছে গঙ্গায় তলিয়ে যান বর্ধমানের এক যুবক। পর পর এমন দুর্ঘটনা বেআব্রু করে দিয়েছে গঙ্গার ঘাটগুলিতে ‌নিরাপত্তা ব্যবস্থার করুণ চেহারাটা। যার সমর্থন মিলেছে গঙ্গার ঘাট লাগোয়া বিভিন্ন পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের বক্তব্যে। তাঁরা স্বীকার করেছেন, ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক গলে যে কোনও সময় দুর্ঘট‌না ঘটতে পারে।

জেলার একটি থানার ওসি-র কথায়, ‘‘বিসর্জনের সময় কেউ ডুবে গেলে পেশাদার ডুবুরি না থাকায় উদ্ধারকাজে সমস্যা তো হয়ই। সাঁতারে পটু, এমন কিছু স্থা‌নীয় লোকজনকে অনুরোধ করে নৌকো নিয়ে আমাদেরই খুঁজে বেড়াতে হয়।’’ তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে এই কাজে নামানো কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদেরই একাংশ।

উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘কলকাতার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। তবে তার মধ্যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ রাখতে চেষ্টা করেছি।’’ তাঁর দাবি, দোলতলা ঘাটে পুর-এলাকার বহু প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। এখানে অধিকাংশ প্রতিমাই গঙ্গায় ফেলেন কু‌লিরা। পুজো উদ্যোক্তাদের পারতপক্ষে জ‌লে নামতে দেওয়া হয়নি। কেউ যাতে ঝুঁকি নিয়ে জলে না নামেন, সে জন্য মাইকে লাগাতার ঘোষণা হয়েছে। শ্রীরামপুরেও সাধারণ মানুষকে ঘাটে নামতে দেয়নি পুলিশ।

বছর খানেক আগে শ্রীরামপুরে এক যুবক গঙ্গায় ত‌লিয়ে যান। টানা দু’দিন প্রশিক্ষিত ডুবুরি আনার দাবি জানালেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত পথ অবরোধ করে জনতা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। পরে ডুবুরি আসে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় দেহ ‌উদ্ধার করে তারা।

রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপর্যয় মেকাবিলা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কল‌কাতার কাছের এই জেলায় সে ভাবে কোনও কাজ হয়নি। গঙ্গায় নিখোঁজদের উদ্ধারে অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন কলকাতা থেকে ডুবুরি আসবেন! উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত দশটি পুরসভা রয়েছে গঙ্গার ধারে। রয়েছে জিরাট, বলাগড়, গুপ্তিপাড়ার মতো গ্রামীণ এলাকা। মাঝেমধ্যেই গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন দেহ উদ্ধারে ডুবুরি আনতে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়।

জেলায় সিভিল ডিফেন্স থাকলেও তাদের পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। ডুবুরিও নেই। পুলিশের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই বিসর্জনে আসা লোকজন মদ্যপ অবস্থায় থাকেন। সে সব ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। আর কেউ জলে পড়ে গেলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করার মতো পরিকাঠামো না থাকায় পরিস্থিতির মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়ে। ডুবুরি না থাকায় সমস্যা বাড়ে। তাই জেলা সদরে সকলের চোখের সামনে কেউ তলিয়ে গেলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোন‌ও উপায় থাকে না। গোটা জেলায় প্রশিক্ষিত ডুবুরি নেই কোথাও।

বছর কয়েক আগে এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছিলেন বৈদ্যবাটি পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান অজয়প্রতাপ সিংহ। পুরসভার তরফে প্রস্তাব ছিল, পুর এলাকায় সাঁতারে অত্যন্ত দক্ষ কিছু যুবক আছেন। গঙ্গার জোয়ার-ভাটার সঙ্গেও তাঁরা পরিচিত। রাজ্য সরকারের তরফে এই যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত সরঞ্জাম দেওয়া হোক। পুরসভার তত্ত্বাবধানে নৌকোডুবি-সহ যে কোনও ঘটন‌ায় উদ্ধারকাজে পাঠানো হবে তাঁদের। প্রাথমিক ভাবে পুরসভার তরফে তাঁদের বেতনের ব্যবস্থাও করা হবে। যদিও ওই প্রস্তাব নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

Immersion procession
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy