সাংহাইয়ের জ়ুহুই এলাকায় নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে হঠাৎ তীব্র সচেতনতা লক্ষ্য করি দিন কয়েক আগে। যখন ওখানে ছিলাম। দেশে ফিরেছি মঙ্গলবার। যদিও তখন ওখানকার সাধারণ মেহনতি মানুষের কাছে সেই সচেতনতার আঁচ তেমন ভাবে পড়েনি। তাই পথেঘাটে মাস্ক না পরে অনেককে ঘুরতে দেখেছি কয়েক সপ্তাহ আগেও।
ওখানে থাকতেই জানতে পারি, এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের গতিবিধি সম্পর্কে। জানতে পারি, এই ভাইরাসের উৎস এবং আক্রান্তের পরিণতির ব্যাপারেও। সাধারণ করোনাভাইরাসে কিন্তু আমরা সবাই জীবদ্দায় অন্তত একবার আক্রান্ত হই। যা একেবারেই প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু এই নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের দেহে এই প্রথম দেখা যাচ্ছে বলে শুনলাম। এর মোকাবিলায় আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। প্রস্তুত ছিল না চিনের স্বাস্থ্য দফতরও।
স্ত্রী তুলিকাকে নিয়ে আমি সাংহাইয়ে ডর্মেটরিতে থাকি। রান্না-বান্না নিজেদেরই করতে হয়। এই সময়টা প্রতি বছরই সাংহাই প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। কারণ, নতুন বছরের ছুটি। বাইরে থেকে আসা লোকজন এই সময়ে বাড়ি ফিরে যান। চিনের কাজের ক্যালেন্ডার আদতে ১১ মাসের। ১৭ জানুয়ারি ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন। নববর্ষের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে এই ভাইরাস।
এর আগে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অনেকে। তাই বিনা বিলম্বে সঙ্কটকালীন তৎপরতার প্রচার শুরু হয় চিনের নানা মাধ্যমে। এই ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সকলকে কিছু জরুরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যেমন, সর্বদা মাস্ক পরা, জনবহুল স্থানে না-যাওয়া, বারবার হাত ধোয়া ইত্যাদি। কিন্তু এরপরেও মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে বলে শুনছি। সংক্রমণ রুখতে এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান, হুবেইকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বাকি দেশ থেকে। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় সমস্ত রকম যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এই ভাইরাসের মোকাবিলার জন্য বিশেষ পরিষেবা শুরু হয়েছে ছোট-বড় সব হাসপাতালে। সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হলে অবিলম্বে যোগাযোগ করার জন্য হেল্পলাইন নম্বরের পাশাপাশি নানা মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ও দেশের সব বিমানবন্দরে ইনফ্রা-রেড থার্মোমিটারের ব্যবহার হচ্ছে। অসুস্থতার প্রমাণ মিললেই ভর্তি করানো হচ্ছে বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থায়। কোরোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের ছুটি এ মাসের ২ তারিখের বদলে ১৭ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।