Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
আপত্তি তুললেন সাধারণ মানুষ
Environment

রাস্তা সম্প্রসারণে গাছ কাটার ফরমান জারি

পরিবেশকর্মীরা জানান, গাড়ির ধোঁয়া থেকে প্রচুর কার্বন বের হয়। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ সেই কার্বনের অনেকটা টেনে নেয়। গাছ ভূমিক্ষয় রোধ করায় বৃষ্টি বা অন্য প্রাকৃতিক কারণে রাস্তা ধসে যায় না। গাছ প্রচুর অক্সিজেন দেয়।

রাস্তা সম্প্রসারণ হলে কাটা পড়বে এই গাছ। ছবি: দীপঙ্কর দে

রাস্তা সম্প্রসারণ হলে কাটা পড়বে এই গাছ। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫৬
Share: Save:

সম্প্রসারিত হবে রাস্তা। সে জন্য কাটা হবে হাজারের উপরে গাছ। সিঙ্গুরের বড়া থেকে শিয়াখালা হয়ে জাঙ্গিপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় গাছেদের এই ‘মৃত্যু-ফরমানে’ ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মী থেকে সাধারণ মানুষপ্রশাসনের অবশ্য বক্তব্য, রাস্তাটি চওড়া হলে যানজট থেকে রেহাই মিলবে। কমবে দুর্ঘটনা। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গাছ কাটা হোক, কেউ চায় না। কিন্তু উন্নয়নের জন্য গাছ কাটতে হলে তো কিছু করার নেই। রাস্তাটি চওড়া হলে অনেক সমস্যা মিটবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের ২৭ কোটি টাকায় ২৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা পাকাপোক্ত ভাবে তৈরি এবং সম্প্রসারণের কাজ করছে পূর্ত (সড়ক) দফতর। এ জন্য ১০৫৩টি গাছ কাটার অনুমতি মিলেছে। শিয়াখালা থেকে জাঙ্গিপাড়া পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশের গাছের আধিক্য বেশি। তালিকায় রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, বট, অশত্থ, নিম, বাবলা, শিরীষ, শিশু, অর্জুন, আকাশমনি, ছাতিম, শিমূল, কদম, কৃষ্ণচূড়া, সোনাঝুড়ি প্রভৃতি।পার্থপ্রতিম দাশগুপ্ত নামে এক ব্যক্তি ওই রাস্তায় গাছ কাটা বন্ধের আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছেন‌ জেলাশাসকের কাছে। প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে পূর্ত দফতর এবং বন দফতরে। পার্থবাবু বলেন, ‘‘রাস্তা চওড়া করতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন মোটেই কাজের কথা নয়। এ জন্য যে আখেরে আমাদেরই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি, তা তো কারও অজানা নয়। আমপানে অসংখ্য গাছ পড়ে গিয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণ কী ভাবে হবে, জানা নেই। তার মধ্যে এত গাছ কেটে ফেলতে হবে?’’ পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক অতীতে দিল্লি রোড, অহল্যাবাঈ রোড সম্প্রসারণের জন্য বহু গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ লাগানো হয়নি।

পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উন্নয়নের যজ্ঞে গাছকে আহুতি দেওয়া চলছেই। এখন তো প্রযুক্তির সাহায্যে গাছকে অন্য জায়গায় স্থাপন করা যায়। তেমন হলে সেই চেষ্টা করা হোক।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, রাস্তা নির্মাণ বা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বন দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে গাছ কাটা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে, একটি গাছ কাটলে অন্তত পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে। যে প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে, সেই গাছই লাগাতে হবে। কিন্তু ওই নিয়ম অনেক সময়েই মানা হয় না বলে অভিযোগ।

পরিবেশকর্মীরা জানান, গাড়ির ধোঁয়া থেকে প্রচুর কার্বন বের হয়। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ সেই কার্বনের অনেকটা টেনে নেয়। গাছ ভূমিক্ষয় রোধ করায় বৃষ্টি বা অন্য প্রাকৃতিক কারণে রাস্তা ধসে যায় না। গাছ প্রচুর অক্সিজেন দেয়। গাছ কাটলে তাতে বসবাসকারী প্রচুর পাখি-পোকা বেঘর হয়। এ রাজ্যের একাধিক রাস্তার পাশে গাছ কাটা নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। বারাসত-পেট্রাপোল রাস্তায় চার হাজার গাছ কাটা নিয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা, আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘উন্নয়নের অর্থনৈতিক গুরুত্ব হিসেব করা হয়, কিন্তু গাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব যে তার থেকে বহু গুণে বেশি, সেই হিসেব করবে কে?’’সব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জেলা পূর্ত দফতরের আধিকারিক বলেন, ‘‘গাছ কাটার জন্য বন দফতর অনুমতি দিয়েছে। একটি গাছ পিছু পাঁচটি গাছ লাগানো হবে। মানুষের আপত্তি নিয়ে জেলাশাসকের দফতর থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। জানালে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.