Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাঁধ রক্ষায় পুরসভার দ্বারস্থ সেচ দফতর

দিন কয়েক আগে পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে সেচ দফতর জানিয়েছে, বেআইনি নির্মাণে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বাঁধের। অবিলম্বে নির্মাণ সরিয়ে বাঁধ সংস্কার করা না-হলে পুরো শহর বিপদের মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

দ্বারকেশ্বরের বাঁধে বসবাসকারীদের ঘর। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

দ্বারকেশ্বরের বাঁধে বসবাসকারীদের ঘর। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৩
Share: Save:

আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ দখল করে অবৈধ বসবাসকারীদের সরাতে আরামবাগ পুরসভার দ্বারস্থ হল সেচ দফতর। নদের পূর্ব দিকের বাঁধে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শ’চারেক বেআইনি নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।

দিন কয়েক আগে পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে সেচ দফতর জানিয়েছে, বেআইনি নির্মাণে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বাঁধের। অবিলম্বে নির্মাণ সরিয়ে বাঁধ সংস্কার করা না-হলে পুরো শহর বিপদের মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার শ্রীকান্ত পাল বলেন, “অবৈধ নির্মাণের জেরে বাঁধের আকার-আকৃতি এবং স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে চলেছে। জলের চাপ অনুযায়ী বাঁধের বিভিন্ন স্তরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধ দখলমুক্ত না-করা পর্যন্ত সংস্কারও করা যাচ্ছে না। বন্যায় বাঁধ ভাঙলে পুরো শহর ভেসে যাবে।’’

বাঁধে অবৈধ ভাবে বসবাসের জেরে শহরে বন্যার আশঙ্কায় কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুর-প্রশাসক স্বপন নন্দী। তিনি বলেন, “সেচ দফতরকে কতটা সহযোগিতা করতে পারব জানি না। আপাতত হরিজন কলোনি-র কিছু পরিবার-সহ ৩২টি পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য শহরের এক বিশিষ্ট মানুষের দান করা ৪ কাঠা জায়গা পেয়েছি। আরও জায়গার খোঁজ চলছে। বাঁধের দখলকারীদের সবাইকে বলা হয়েছে, নিজেদের জায়গা থাকলে আবেদন করতে। আমরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাঁদের ঘর তৈরি করে দেব।”

সেচ দফতর এবং পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার দিক থেকে আসা দ্বারকেশ্বর নদ আরামবাগ গিয়ে বয়ে গিয়ে দক্ষিণে রূপনারায়ণ নদে মিশেছে। নদের পূর্ব পাড়ে শহরের ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ড পড়ছে। সেখানে হাট-বাজার রয়েছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জেলখানা পাড়া থেকে বাঁধ বরাবার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন পাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সতীতলা হয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বৃন্দাবনপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ দখল করে অন্তত ৪০০ ছিন্নমূল মানুষের বাস। তাঁদের কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ সাফাইকর্মী, কেউ শহরের বিভিন্ন বাজারে ছোটখাটো ব্যবসা করেন।

বেআইনি ভাবে বাঁধে বসবাসের কথা মানছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন কলোনির ধীরেন হাঁড়ি। তিনি বলেন, “আমরা বংশানুক্রমে পুরসভায় সাফাইয়ের কাজ করি। আমাদের পৃথক কলোনি ভেঙে বাম আমলে দু’টি ভবন নির্মাণ করে ২৫ জনের থাকার ব্যবস্থা হয়। বাকি আমরা ১৫-১৬টি পুরসভার অস্থায়ী কর্মী পরিবার বাসস্থানের দাবি করলেও কিছু হয়নি। তাই বাঁধে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছি।’’ কোর্টপাড়া সংলগ্ন বাঁধের বাসিন্দা, চাল ব্যবসায়ী লক্ষ্মণ খটিক এবং আনাজ ব্যবসায়ী নমিতা সাঁতরাও বলেন, “উঠে যেতে বলেনি কেউ। বললে যাবই বা কোথায়? পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন, তারপর বাঁধ উদ্ধার অভিযান চালাক।”

বর্ষায় ফি-বছর প্লাবিত হয় আরামবাগ মহকুমা। দ্বারকেশ্বরের বাঁধ ভেঙে আরামবাগ শহর জলমগ্ন হওয়ার নজিরও রয়েছে। ২০১৭ সালে মহকুমাশাসকের বাংলো সংলগ্ন বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় পুরো শহর। তখন থেকেই নদের বাঁধ জুড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরাতে সেচ দফতর উদ্যোগী হয়। দাবি ওঠে পুরবাসীদের তরফেও। কিন্তু কিছু হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Irrigation department Arambagh municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE