লোকসান বাড়ছে। তাই পাট চাষ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন আরামবাগ মহকুমার চাষিরা। বছর আটেক আগেও এই মহকুমা জুড়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হতো। কিন্তু এখন সেই এলাকা কমতে কমতে চলতি বছরে ১০৮৬ হেক্টরে নেমে এসেছে। পাটের পরিবর্তে ‘অর্থকরী ফসল’ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে বাদাম এবং তিল।
মূলত চাষের খরচ বাড়া, শ্রমিক অমিল, জলের অপ্রতুলতা এবং ‘ন্যায্য’ দাম নিয়ে ক্ষোভের কারণে পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন এই মহকুমার অনেক পাট চাষি। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমার পাট চাষের ইতিহাস অনেক পুরনো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৫ সাল নাগাদ পাট চাষকে রপ্তানিযোগ্য ফসল হিসেবে গণ্য করতে শুরু করার পর থেকেই আরামবাগ মহকুমা এলাকায় পাট চাষের প্রচলন বাড়ে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সাল নাগাদ এই মহকুমায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর পর্যন্ত পাট চাষ হয়েছে। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে আরামবাগ মহকুমায় প্রায় ৮৭৬৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। ২০১৫ সালে পাট চাষের এলাকা ছিল ১৭০০ হেক্টর। কিন্তু চলতি বছরে সেই এলাকা আরও প্রায় ৭০০ হেক্টর কমে গিয়েছে।
পাট চাষিরা জানাচ্ছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরামবাগ মহকুমায় সর্বত্র পাট কেনার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এখনও বহু চাষি ফড়েদের কাছে পাট বিক্রি করেন। তা ছাড়া, গ্রামাঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির নির্ভরতাও এখন কমে যাচ্ছে। তাই বংশানুক্রমে পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি এই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়েছেন পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিমল হাটি-সহ অনেক পাট চাষি।
বিমলবাবু বলেন, “পাট বিক্রি করে খরচ অনুপাতে দাম পাওয়া যায় না। তার চেয়ে জমিতে বাদাম কিংবা তিল চাষ করে ভাল লাভ পাওয়া যাচ্ছে।” পুড়শুড়ার সোদপুর গ্রামের পাট চাষি সুকান্ত মণ্ডলের কথায়, ‘‘পাটের বাজার নেই। আলুর বস্তা, ধানের বস্তা সব পলিথিনের হয়ে যাচ্ছে।’’
পাট চাষিদের দাবি, পঞ্চায়েত স্তরে পাট কেনার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে দরকার উন্নত জাতের পাট বীজ। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ। তিনি বলেন, “পাট চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ তাঁরা খরচ অনুপাতে দাম পাচ্ছেন না। জলের সমস্যাও রয়েছে। পাটের বদলে অনেকেই বাদাম ও তিল চাষ করে লাভ পাচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy