Advertisement
E-Paper

কেউ খুন করেনি সুলেখাকে

ব্যান্ডেলের কাজিডাঙার বাসিন্দা সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) শুভেন্দু সাহা অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন।

 নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০০:১৫
 বেকসুর খালাস পাওয়ার পর। ছবি: তাপস ঘোষ

বেকসুর খালাস পাওয়ার পর। ছবি: তাপস ঘোষ

আলমারি আর খাটের মাঝখানে সরু এক ফালি জায়গায় পড়ে ছিল রক্তাক্ত দেহটি— মুখ বাঁধা, গলার নলি কাটা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা সুলেখা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর দেড় বছর ধরে চলেছে হত্যা মামলা। বুধবার বেকসুর খালাস পেল অভিযুক্ত চারজন। নিহত সুলেখাদেবীর ভাই ক্ষুব্ধ শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় আদালতে দাঁড়িয়ে বলে ফেললেন, ‘‘কেউ দিদিকে খুন করেনি! তদন্তে ঘাটতি থাকাতেই সত্যি ঘটনা প্রমাণ করা গেল না। আমরা এ বার প্রকৃত তদন্তের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।’’

ব্যান্ডেলের কাজিডাঙার বাসিন্দা সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) শুভেন্দু সাহা অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন। সরকারি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মামলা চলাকালীন দু’জন সাক্ষী বিরূপ হন। ফরেন্সিক রিপোর্টেও পর্যাপ্ত তথ্য উঠে আসেনি।’’

তদন্তের গাফিলতিতে অভিযুক্তদের এ ভাবে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর বাহাত্তরের সুলেখাদেবী বাড়িতে একাই থাকতেন। দু’জন পরিচারিকা দেখাশোনা করতেন। ২০১৭ সা‌লের ২৬ অক্টোবর সকালে বাড়ির দরজা ভেঙে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। ঘরের আলমারি এবং খাটের মাঝখানে তাঁর দেহ মেলে। অভিযোগ, তাঁর আলমারিতে থেকে নগদ কয়েক হাজার টাকা, গয়না এবং মূল্যবান কিছু জিনিস খোওয়া গিয়েছিল।

বৃদ্ধাকে এ ভাবে কেউ যে খুন‌ করতে পারে— পড়শিরা তা ভাবতেই পারেননি। ওই দিনই মৃতার ভাই শুভেন্দু চুঁচুড়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনার ২০ দিন পর গোর্খা পাসোয়ান নামে স্থানীয় এক দুষ্কৃতীকে এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ধরা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সুলেখাদেবীর পরিচারিকা মাধবী কর্মকার, তার স্বামী বিশু এবং সুবল কর্মকার নামে এলাকার এক রাজমিস্ত্রিকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।

পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়, গোর্খা, মাধবীর বাপের বাড়ি থেকেও খোওয়া যাওয়া বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার হয়েছে। একটি হাঁসুয়াও মেলে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন জিনিসের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ধৃত চার জনের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু গোর্খা বাদে বাকি তিন জন জামিনে ছাড়া পান।

সরকারি আইনজীবী জানান, ঘটনায় কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। দু’জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র আদালতে শনাক্ত করতে অস্বীকার করেন। তার উপর হাঁসুয়ায় লেগে থাকা রক্ত সুলেখাদেবীরই কি না, ফরেন্সিক পরীক্ষায় তা বোঝা সম্ভব হয়নি। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বিষয়টি প্রমাণ করার মতো পর্যাপ্ত রক্ত হাঁসুয়ায় মেলেনি। ফলে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি
অভিযুক্ত চারজনকে।

ঘটনায় অসন্তুষ্ট স্থানীয় বাসিন্দারাও। সুলেখাদেবীর প্রতিবেশী গোপাল দাস বলেন, ‘‘সুলেখাদেবীকে যে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছিল, তা তো বোঝাই যাচ্ছিল। আমরা সবাই চেয়েছিলাম, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি। কিন্তু কে দোষী— পুলিশ তো তা প্রমাণই করতে পারল না। তা হলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়!’’

Sulekha Mukherjee case Kalyani University Professor Bandel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy