Advertisement
E-Paper

ভোট মিটতেই শুরু অশান্তি

সোমবার ভোটের পর ওই লোকেরাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন—এমন অভিযোগ তুলে রাত থেকে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য কুতুবুদ্দিন মল্লিক-সহ তাঁর দলবল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০২:০৯
ঝামেলা: তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত আরামবাগের বাসুলিচক। নিজস্ব চিত্র

ঝামেলা: তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত আরামবাগের বাসুলিচক। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পুরনো একটি খুনের ঘটনায় ঘরছাড়া ছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে আরামবাগের বাসুলিচক গ্রামের সেই ৯০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীকে ঘরে ফিরিয়েছিল প্রশাসন।

সোমবার ভোটের পর ওই লোকেরাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন—এমন অভিযোগ তুলে রাত থেকে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য কুতুবুদ্দিন মল্লিক-সহ তাঁর দলবল। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত লাঠি, রড নিয়ে এলাকায় তাণ্ডব দেখাল সেই দল। এমনকি উঠল বোমাবাজির অভিযোগও।

ঘটনায় আহত হন ঘরে-ফেরা এক মহিলা সহ ৫ জন। তাঁদের আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। পুলিশ জানায়, দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েেছ, গ্রামবাসীর গড়া জলসা কমিটির দখলদারি নিয়ে তৃণমূলের মূল সংগঠনের সঙ্গে যুব সংগঠনের বিবাদ বহু দিনের। তিন বছরের জলসার জন্য সংগ্রহ অর্থ তৃণমূলের মূল সংগঠনের নেতারা কোন খাতে খরচ করেছেন সেই হিসাব চাওয়া ঘিরে ২০১৮ সালের ২ মার্চ তৃণমূলের যুব সংগঠনের নেতা সফিয়া মল্লিককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য হাসান মল্লিক-সহ অন্য অভিযুক্তদের। তারপর থেকে ঘরছাড়া ছিলেন হাসানের অনুগামী শ’দেড়েক সমর্থক। কয়েকজনকে গ্রামে ফেরানো হলেও জামিনে মুক্ত ৯০ জনকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। সেই ৯০ জনকেই গত বৃহস্পতিবার গ্রামে ফেরানো হয়।

ঘরে ফেরা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য হাসান মল্লিকের অভিযোগ, “আমরা নাকি সবাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছি। এই দাবি করে রাত ১০ টা থেকে ২টা পর্যন্ত বোমাবাজি এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। নেতৃত্ব দিয়েছে কুতুবুদ্দিন মল্লিক, সাহালাম মল্লিক আর সঙ্গীরা।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দীর নির্দেশেই এমন হচ্ছে। পুরো বিষয়টা আমরা প্রশাসনকেও জানিয়েছি।”

ঝামেলা: মঙ্গলবার সকালে জখম বাম এজেণ্টের বাড়িতে বাম প্রার্থী প্রদীপ সাহা। পান্ডুয়ার হরাল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য কুতুবউদ্দিনের দাবি, “গ্রামের মানুষই চাইছেন না, ওই দুষ্কৃতীরা গ্রামে থাকুক। দলের নেতারাও সেটা চাইছেন না। বিক্ষোভ গ্রামের বাসিন্দারা দেখিয়েছেন।”

অন্য দিকে, মঙ্গলবার দুপুরে আরামবাগের ডোঙ্গলে তিন বিজেপি নেতা-কর্মীকে দ্বারকেশ্বরের চরে টেনে নিয়ে গিয়ে লাঠি, বাঁশ দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় একই সময় আরামবাগের গৌরহাটিতেও তিনজনকে একইভাবে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

আহত ডোঙ্গলের সুভাষ আদক, মন্টু রায়, বাসুদেব আদক, এবং শিবু বাড়ুই, অভিজিৎ সাঁতরা ও বাপি পোড়েলকে গুরুতর জখম অবস্থায় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিকালে খানাকুলের বালিপুরেও বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা হয়। তাঁদের জনা ছয়েক আহত হলেও স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়।

আরামবাগের বিজেপি েনতা কিঙ্কর পাল এবং খানাকুলের বিজেপি নেতা বিকাশ দলুইয়ের অভিযোগ, পুলিশে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য লিখিত অভিযোগ আসেনি।

দুই ক্ষেত্রেই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “বাসুলিচকের ঘটনায় গ্রাম থেকে কাউকে বের করে দেওয়ার কথা বলিনি। মিথ্যা চক্রান্ত করে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।”

আর মারধরের প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপির লোকরাই গৌরহাটিতে আমাদের ছেলেদের প্রথম মারধর করে। শ্যামল সাঁতরা নামে আমাদের সেই কর্মী মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গ্রামবাসীরাই রুখে দাঁড়ান।”

আবার সোমবার রাতে পান্ডুয়া ব্লকের বৈঁচীর হরাল গ্রামে সিপিএমের বুথ এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

সিপিএমের অভিযোগ, ভোট মিটে যাওয়ার পর রােত বাড়ি ফেরার পথে দুই বুথ এজেন্ট আবদুল রেজাক ও শেখ ইসরাফিলকে মারধর করেন তৃণমুলের কর্মীরা। অভিযোগ, ভোট শেষে বাড়ি ফেরার পথে দু’জনকে রাস্তায় ধরে মারধর করা হয়। পরে তৃণমূলের লোকজন রেজাকের বাড়িতেও চড়াও হন বলে অভিযোগ। আবদুল রেজাকের স্ত্রী লিলিফা বিবি বলেন, ‘‘ওরা বিদ্যুৎয়ের লাইন বন্ধ করে দেয়। সারা রাত আতঙ্কে কেটেছে।’’

আবদুল রেজাক বলেন, ‘‘ভোট শেষে কাগজ জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামেরই কয়েকজন তৃণমুল কর্মী আমাকে ও ইসরাফিলকে হঠাৎ মারধর শুরু করে। আমার মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। গ্রামে তৃণমুল ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না বলে হুমকি দিচ্ছিল ওরা।’’

সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা মঙ্গলবার সকালে রেজাকের বাড়িতে আসেন। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘তৃণমুল ভয় পেয়েছে। তাই আমাদের কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে। আমি পান্ডুয়া থানা ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছি।’’

তৃণমুল নেতা তথা পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘ব্লকের সব বুথে সিপিএম এজেন্টই দিতে পারে নি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। হরাল গ্রামে রাতেই টহল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অন্য দিকে, জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাটে সোমবার রাতে তৃণমূল সমর্থকেরা বিজেপি কর্মীদের মারধর করে বলে অভিযোগ। জখম হন দুই বিজেপি কর্মী। তাঁরা জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে কয়েকজন তৃণমূল সমর্থক রাজবলহাটের ছোটদিঘির ধার এলাকার বাসিন্দা বুদ্ধদেব হালদারকে মারধর করে। তাঁকে প্রথমে জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে এবং পরে শ্রীরামপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে অন্য একটি ঘটনায় ওই এলাকাতেই সন্তু মালিক নামে এক বিজেপি এজেন্টকে মারধর করা হয়। তাঁকে জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য, তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘রাজবলহাটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই সোমবার আমাদের কর্মী পূর্ণ কাঁড়ারকে বিজেপি সমর্থকেরা মেরে মাথা ফাটায়। অন্য দু’জন আহত হন। আর এখন বিজেপি প্রার্থী মারধরের গল্প শোনাচ্ছেন।’’

Lok Sabha Election 2019 Election 2019 Phase 5 CPM TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy