Advertisement
E-Paper

হুইপ উড়িয়ে প্রধান পদ দখলে নিচুতলার কর্মীরাই

পঞ্চায়েতের সিংহভাগে দেখা গিয়েছে, কাকে প্রধান করা হবে সে বিষয়ে দলের উপরতলার নির্দেশ মানেননি নীচের তলার কর্মীদের একটা বড় অংশ। দলের মনোনীত প্রার্থীকে বাতিল করে নিজেদের মনোমত প্রাথীকে প্রধান নির্বাচিত করেছেন তাঁরা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪৮

মনোনয়নের আগেই তৃণমূলের ভিতরের কোন্দলে উত্তপ্ত ছিল সাঁকরাইল। বোর্ড গঠনেও সেই ছবি বদলায়নি। বরং রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এমনটাই হওয়ার ছিল।

ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে ১৪টিতে। তার মধ্যে ১৩ টিতে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল। এই ১৩টি পঞ্চায়েতের সিংহভাগে দেখা গিয়েছে, কাকে প্রধান করা হবে সে বিষয়ে দলের উপরতলার নির্দেশ মানেননি নীচের তলার কর্মীদের একটা বড় অংশ। দলের মনোনীত প্রার্থীকে বাতিল করে নিজেদের মনোমত প্রাথীকে প্রধান নির্বাচিত করেছেন তাঁরা।

অথচ, দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে এইসব জায়গায় পঞ্চায়েত সদস্যদের হুইপ দেওয়া হয়েছিল। তাতে নিচু তলার কর্মীদের টলানো যায়নি। দলের জেলা সভাপতি (সদর) ও সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল এটাই বড় কথা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে পঞ্চায়েতের সদস্যরা যাঁকে মনে করেছেন তাঁকে প্রধান হিসাবে নির্বাচন করেছেন। পঞ্চায়েতে এটা নতুন ঘটনা নয়।’’

অরূপবাবুর কথার রেশ টেনে দলের সিদ্ধান্ত না মানা কর্মীদের একটা অংশ অবশ্য জানিয়েছেন, এটা নেতারা আগে বুঝলে ভাল করতেন। রঘুদেববাটী পঞ্চায়েতের এক নেতা বলেন, ‘‘নিচুতলার কর্মীদের মনোভাবকে মর্যাদা দিলে এইসব অবাঞ্ছিত ঘটনাই ঘটত না।’’

রঘুদেববাটী পঞ্চায়েতে প্রধান পদে দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন লোকমান মল্লিক। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে দিলীপ দে-কে প্রধানের পদে চেয়েছিলেন নিচুতলার কর্মীদের একাংশ। সেই কারণে প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটাভুটি হয়। জিতে গিয়েছেন দিলীপবাবুই।

নলপুরে প্রধানের পদে প্রার্থী ছিলেন গৌতম ঘড়ুই। কর্মীদের একাংশ চান বিশ্ব মাকালকে। ভোটাভুটিতে তিনি জিতে প্রধান হন। দক্ষিণ সাঁরকরাইলে প্রধানের পদে দলের প্রার্থী ছিলেন শেখ মইদুল। প্রধান পদে দাঁড়াতে গেলে নিয়মানুযায়ী একজন করে প্রস্তাবক ও সমর্থক দরকার হয়। কিন্তু মইদুল প্রস্তাব ও সমর্থক— কাউকেই পাননি। ফলে প্রধানের পদে দাঁড়াতেই পারেননি। তাঁর বিরুদ্ধে কর্মীদের একাংশ প্রার্থী করেন কাশ্মীরা খানকে। তিনি প্রধান হন।

আন্দুলে দলের পক্ষ থেকে প্রধান হিসাবে ঠিক করা হয় অসীমা বসুকে। তিনি তৃণমূলের হলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকেই দলের পক্ষ থেকে প্রধান পদে ঠিক করা হয়। কিন্তু দলীয় কর্মীদের একাংশ এই পদে ঠিক করেন মানসী চট্টোপাধ্যায়কে। বিবাদ টের পেয়ে অসীমাদেবী আর নির্বাচনেই দাঁড়াননি। মাসিলাতেও দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়ে জিতে যান কর্মীদের একাংশের ঠিক করা প্রার্থী গোরাই খান। থানামাকুয়ায় দলের পক্ষ থেকে ঠিক করা হয়েছিল প্রধান হবেন মালতী রায়। কিন্তু কর্মীদের একাংশ ঠিক করেন মঞ্জু সেনকে। তিনিই প্রধান নির্বাচিত হন। জোড়হাটে দলের পক্ষ থেকে ঠিক হয় প্রধান হবেন সুনীতা ভট্টাচার্য। কর্মীদের একাংশ ঠিক করেন প্রধান হবেন মিনতি সেনাপতি। ভোটাভুটিতে তিনিই প্রধান হন।

তবে এই ছবিতে নতুন কিছু দেখছেন না রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে টিকিট বিলিকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার ছিল সাঁকরাইল। বিদায়ী পঞ্চায়েতের অনেক প্রধান, উপপ্রধান, সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, সদস্য এ বারের নির্বাচনে টিকিট পাননি। তাঁদের অনেকেই নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে যান।

পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেয়েছিলেন উপর তলার নেতারা। সেই পরিস্থিতিই ফের দেখা গেল বোর্ড গঠনের সময়ে। জেলা বা স্থানীয় নেতৃত্ব কথা মানেননি নীচের তলার কর্মীদের একটা বড় অংশ। বেশির ভাগ পঞ্চায়েতেই দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে নিজের নিজের মতো করে প্রধান নির্বাচন করে নিয়েছেন তাঁরা।

Panchayat TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy