Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মানবতার ধর্মেই প্রশান্তের পাশে মাবুদ

লক্ষ্মীপুজোর সকালে ডানকুনিতে দিল্লি রোডের ধারে চায়ের দোকানে প্রশান্তবাবুর সঙ্গে আলাপ মাবুদের। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন প্রশান্তবাবু।

পাশে: প্রশান্তর পাশে মাবুদ। নিজস্ব চিত্র

পাশে: প্রশান্তর পাশে মাবুদ। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
ডানকুনি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

পাড়ার কেউ অসুস্থ হলে তিনি ‘মুশকিল আসান’। রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনায় জখম অপরিচিতদের কাছেও তাই। ডানকুনির শেখ মাবুদ আলি ধনী-দরিদ্র বা জাতি-ধর্ম বিচার করেন না। কেউ বিপদে পড়লেই ছুটে যান। তাঁর তৎপরতাতেই চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন কানাইপুরের প্রশান্ত সামন্ত।

লক্ষ্মীপুজোর সকালে ডানকুনিতে দিল্লি রোডের ধারে চায়ের দোকানে প্রশান্তবাবুর সঙ্গে আলাপ মাবুদের। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন প্রশান্তবাবু। ডান পায়ে ঘা। চিকিৎসা নয়, পঁয়তাল্লিশ পেরনো মানুষটি চেয়েছি‌লেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেখানেই মিলল সব সমস্যার সমাধান।

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় নামে এক পরিচিতের হোটেলে প্রশান্তর থাকার বন্দোবস্ত করে দেন মাবুদ। পায়ের ক্ষত সারাতে গত মঙ্গলবার তাঁকে ভর্তি করেন হাসপাতালে। সেখানে ‘ঘরের লোক’ হয়েই প্রশান্তের চিকিৎসা করাচ্ছেন মাবুদ। বলছেন, ‘‘ওঁকে সুস্থ করে তুলতে চেষ্টার কসুর করব না। ওঁর একটা কাজের খুব দরকার। সেরে উঠলে সেই চেষ্টাও করব।’’

বছর আটত্রিশের মাবুদ থাকেন ডানকুনি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চাকুন্দিতে। মাস খানেক আগে ডানকুনিতে দিল্লি রোডের ধারে একটি দোকানে ফাই-ফরমাস খাটা এক ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করিয়েছিলেন হাসপাতালে। আদতে বিহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি এখন সুস্থ। পথেঘাটে দুর্ঘটনার খবর পেলে ছুটে যান মাবুদ। তিনি জানান, অন্তত ৫০টি ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাগ্রস্তকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘মাবুদদা অন্য ধাতুতে গড়া। আমার বাবা যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন সারাক্ষণ শ্মশানে ছিলেন।’’

স্ত্রী সারিকা বেগম, ছেলে ইস্তেফাক এবং মেয়ে মোবাস্বেরাকে নিয়ে মাবুদের সংসার। ছেলে দ্বাদশ, মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। কোনও মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হলে স্বামীর সঙ্গে সারিকাও বেরিয়ে পড়েন। চন্দননগরের হাটখোলা রথ সড়কের বাসিন্দা মিঠু দাস ডানকুনির কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে মাবুদের সঙ্গে আলাপ হয়। পরিবারের দুর্দশার কথা শুনে তাঁর স্বামীকে কাজের ব্যবস্থা করে দেন মাবুদ।

ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মাবুদ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন। মাথায় ফেজ টুপি এবং রুমাল। পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘পড়াশোনা বিশেষ জানি না। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। ছোট থেকে মানবতার ধর্মটা শিখেছি।’’ বছরভর সংস্থার হয়ে গাছ লাগানো, রক্তদান শিবির, ক্যান্সার সচেতনতা শিবির-সহ নানা সামাজিক কাজে মেতে থাকেন তিনি। এখন তাঁর প্রথম লক্ষ্য, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি প্রশান্তকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এর আগেও অসুস্থ অনাত্মীয়কে নিজের পরিচয়েই সেখানে ভর্তি করিয়েছেন মামুদ। নিয়মিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনা— সব করেছেন। শনিবার দুপুরে ওই হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কথার মাঝেই মাবুদ ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রশান্তের প্রেসক্রিপশন নিয়ে। পায়ের স্নায়ুর পরীক্ষা করতে দিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতালের লোকজনকে জানিয়ে দেন, ‘‘কালকেই পরীক্ষা করিয়ে আনব।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘দেখবেন উনি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dankuni Seikh Mabud Ali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE