Advertisement
E-Paper

হাসপাতাল থেকে ফিরে বাড়িতে ঠাঁই মিলছে না, পাশে পড়শিরা

এক-দু’টো নয়। টানা বারো বছর মানসিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন। কিন্তু বাড়িতে তাঁর ঠাঁই হল না। অভিযোগ, প্রিয়জনেরা তাঁকে ঘরে উঠতে দিতে চাইছেন না। এই অবস্থায় পাশে পেলেন পড়শিদের। ঘটনাটি হুগলির বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায় লেনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৯

এক-দু’টো নয়। টানা বারো বছর মানসিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন। কিন্তু বাড়িতে তাঁর ঠাঁই হল না। অভিযোগ, প্রিয়জনেরা তাঁকে ঘরে উঠতে দিতে চাইছেন না। এই অবস্থায় পাশে পেলেন পড়শিদের। ঘটনাটি হুগলির বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায় লেনের।

ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুপ্রিয় সাঁধুখা বনেদি পরিবারের ছেলে। বাবা বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর মানসিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ২০০৪ সালে পরিজনেরা তাঁকে কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে অসুস্থ মা, দুই বোন এবং এক বোনের স্বামী রয়েছে‌ন।

ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর আগেই সুপ্রিয়বাবু সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। তার পর থেকে তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। চলতি মাসের গোড়ায় শারীরিক ভাবে অসুস্থ হলে সুপ্রিয়বাবুকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ৭ অক্টোবর রাতে সেখান থেকে তিনি বাড়িতে পালিয়ে আসেন। অভিযোগ, তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাস্তায় রাত কাটাতে দেখে পাড়ার লোকজন খেতে দেন। শুধু তাই নয়, তাঁর অধিকার ফিরিয়ে দিতে বাড়ির সামন‌ে বিক্ষোভও দেখান পড়শিরা। বাড়ির সামনেই একটি টালির ভাঙাচোরা ঘর রয়েছে। সেখানে এক ব্যক্তি ভাড়া থাকেন। পড়শিদের চাপে সুপ্রিয়বাবুকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়। সেখানেই মেঝেতে চাদর পেতে থাকছেন তিনি। সুপ্রিয়বাবু জানান, হাসপাতাল থেকে হেঁটে হাওড়া স্টেশন এবং সেখান থেকে ট্রেনে বৈদ্যবাটিতে চলে আসেন। কিন্তু কেউ ঘরে ঘউটতে দিচ্ছেন না।

এই খবর চাউর হতেই সুপ্রিয়বাবুকে সাহাস্য করতে এগিয়ে আসে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থা মানসিক হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠা লোকজনকে সামাজিক ভাবে পূনর্বাসনের জন্য কাজ করে। বুধবার ওই সংস্থার লোকেরা সুপ্রিয়বাবুর দুই বোন ও এক বোনের স্বামীর সঙ্গে বচসা বেধে যায়। বাড়ির লোকেদের যুক্তি, সুপ্রিয়বাবু ‘পাগল’। তাঁকে ঘরে জায়গা দেওয়া যাবে না। সংস্থার সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার শুক্লা দাস বড়ুয়া বলেন, ‘‘সুপ্রিয়বাবু সুস্থ। তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু বার হাসপাতালের তরফে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সাড়া দেননি। এখন বাড়ি ফিরলেও ওঁকে নিতে চাইছেন না। কী করা যায়, আমরা দেখছি।’’

কী বলছেন পড়শিরা? তাঁদের অভিযোগ, সুপ্রিয়বাবুকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতেই বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা উপ-পুরপ্রধান ব্রহ্মদাস বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিয় বনেদি পরিবারের ছেলে। কিন্তু ওঁর সঙ্গে অবিচার হচ্ছে। বাড়ির লোকজনের একটু সহায়তা পেলে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। প্রয়োজনে আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হব। ওঁর একটা কাজের ব্যবস্থা করারও চেষ্টা করব।’’

হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে সবরকম সহযোগিতা করব। কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’

asylum Family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy