Advertisement
E-Paper

প্রাণ বাঁচিয়েও বিধির গেরোয় বিচ্ছিন্ন ‘বন্ধু’

বৃহস্পতিবার জগাছার ব্যস্ত রাস্তায় ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছিল অবোলা প্রাণীটি। দলছুট হয়ে পড়ায় প্রাণভয়ে লোকজনকে আঁচড়ে-কামড়ে দিচ্ছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০১:৪৪
পাশে আছি: বন দফতরের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে বাঁদরটির সঙ্গে নাজিম আলি। বৃহস্পতিবার, জগাছায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

পাশে আছি: বন দফতরের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে বাঁদরটির সঙ্গে নাজিম আলি। বৃহস্পতিবার, জগাছায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

চোর সন্দেহে গণপিটুনিই হোক বা কুকুর-বেড়াল পিটিয়ে মারা— সাধারণ মানুষের প্রতিহিংসা থেকে কেউই যেখানে রক্ষা পায় না, সেখানে মানবিকতার এক অনন্য নজির গড়লেন হাওড়ার জগাছার বাসিন্দা এক যুবক। জনরোষের হাত থেকে তিনি বাঁচালেন একটি বাঁদরকে।

বৃহস্পতিবার জগাছার ব্যস্ত রাস্তায় ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছিল অবোলা প্রাণীটি। দলছুট হয়ে পড়ায় প্রাণভয়ে লোকজনকে আঁচড়ে-কামড়ে দিচ্ছিল সে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জগাছার প্রেস কোয়ার্টার্স এলাকায়। লোকজন উত্তেজিত হয়ে লাঠি হাতে তাড়াও করেছিল তাকে। হয়তো বা পিটিয়েই মেরে ফেলা হত, যদি না নাজিম আলি নামে এক যুবক ওই মুহূর্তে সেখানে এসে পড়তেন এবং দু’হাত দিয়ে আগলে বাঁদরটিকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এর পরে পেশায় দর্জি ওই যুবকের আদর-যত্নে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধাতস্থ হয়ে ওঠে সেই বাঁদর। ভয় ভুলে নাজিমের বন্ধু হয়ে যায়। এমনকি, কিছু ক্ষণের মধ্যে দু’জনের ভাব এমনই জমে ওঠে যে, ওই যুবকের ঘাড়ে-পিঠে উঠে পড়ে উদ্ধার হওয়া সেই বাঁদর। নতুন জামাকাপড় পরে নাজিমও ইদের উৎসবে নতুন পাওয়া বন্ধুর সঙ্গে কাটিয়ে দেন অর্ধেকটা দিন। ভেবেছিলেন, তাকে নিজের কাছেই রেখে দেবেন। বড় করবেন।

কিন্তু আইন অনুযায়ী তা করা যায় না। রাজ্য বন দফতরের বক্তব্য, আইন মোতাবেক বন্যপ্রাণীদের কোনও ভাবেই ধরে নিজেদের কাছে রাখা যায় না। তাই এলাকার লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বন দফতরের আধিকারিকেরা। তাকেই যে নিতে আসা হয়েছে, তা সম্ভবত বুঝতে পেরেছিল বাঁদরটিও। তাই অফিসারদের দেখেই সে দু’হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরেছিল নাজিমের। শেষে বন দফতরের অফিসারদের অনুরোধে বাঁদরটিকে তাঁদের হাতে তুলে দেন নাজিম। নতুন বন্ধুকে ছেড়ে যেতে অনিচ্ছুক সেই বাঁদরকে এক রকম জোর করেই নিয়ে যান বন দফতরের আধিকারিকেরা।

এ দিন জগাছার বাড়িতে বসে নাজিম বলেন, “মনটা খুব খারাপ লাগছে। বাচ্চাটা আমার কাছে এসে শান্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার কথা মতোই কাজ করছিল। ফলমূল খাইয়েছি, কোল্ড ড্রিঙ্ক দিয়েছি। আমার কাছে থাকলে কী অপরাধটা হত?’’

নাজিমের প্রতি বাঁদরটির ভালবাসা দেখে অবাক এলাকার বাসিন্দারাও। মেহরাজ আলি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বন দফতর এসে বাঁদরটিকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নাজিম মনমরা হয়ে বসে রয়েছে। আসলে ওই তো প্রাণীটির প্রাণ বাঁচিয়েছিল! বন দফতর ওকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে নাজিম কেঁদেও ফেলেছিল।’’

হাওড়ার জেলা বন আধিকারিক সোমনাথ সরকার বলেন, ‘‘মানুষ উত্ত্যক্ত না করলে এই প্রাণীরা কিন্তু কারও অনিষ্ট করে না। ভালবাসা দিলে ওরাও কাছে টেনে নেয়। এই সচেতনতাই তৈরি হওয়া প্রয়োজন। আমরা এই সচেতনতা তৈরি করতে অনেক শিবিরও করছি।’’

Man Monkey Forest Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy