প্রচার রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কার্ড রয়েছে। যাতায়াতের সরকারি সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ হাওড়ার পাঁচটি ব্লকে এখনও ঘরেই প্রসব হয়ে চলেছে বহু মহিলার! ফলে, থেকে যাচ্ছে মা-শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কাও।
গত বছরের জুন মাসে এই জেলার শরৎসদনে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাতিষ্ঠানিক (হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র) প্রসবে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সাত মাস পরেও ছবিটা পাল্টায়নি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরই হিসেব বলছে, বাড়িতে প্রসবের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে উলুবেড়িয়া-১ ব্লক। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িতে প্রসব হয়েছে ৯৩ জনের। ওই সময়সীমার মধ্যে উলুবেড়িয়া-২ ব্লকে ৬০ জন, পাঁচলা ব্লকে ৫১ জন, সাঁকরাইলে ৩০ জন এবং শ্যামপুর-১ ব্লকে ৩০ জন মহিলার বাড়িতে প্রসব হয়েছে। যে সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারাই।
কিন্তু কেন? জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের দাবি, কিছু পরিবার রয়েছে, যাদের বাড়ির মহিলাদের কোনও মতেই প্রসব করানোর জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয় না। তাঁরা সন্তানসম্ভবাদের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কার্ড করান, টিকা দেওযার ব্যবস্থা করেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দেওয়ান। কিন্তু যত আপত্তি হাসপাতালে প্রসব করানোর ক্ষেত্রে। একইসঙ্গে পাড়ার দাই এবং হাতুড়ে চিকিৎসকদের একাংশের ইন্ধন জোগানোর অভিযোগও তুলেছেন ওই স্বাস্থ্যকর্তারা।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস অবশ্য বলেন, ‘‘বাড়িতে প্রসব করানোর ক্ষতিকর দিকগুলি আমরা প্রচার করি। এলাকায় গিয়ে সন্তানসম্ভবা মহিলা ও তাঁদের পরিবারকে বোঝানো হয়। ফলে, কিছুটা হলেও বাড়িতে প্রসব করানোর হার কমেছে।’’
এটা ঠিকই, বাড়িতে প্রসব না-করানোর জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর নিয়মিত প্রচার করে। এমনকি, ‘টোল ফ্রি’ ১০২ নম্বরে ফোন করলে সন্তানসম্ভবাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্সের সুবিধাও রয়েছে। প্রয়োজনে ওই অ্যাম্বুল্যান্সেও প্রসব করানোর ব্যবস্থা আছে। আশাকর্মীরা ঘুরে ঘুরে এই সব সুবিধার কথা প্রচার করে থাকেন। কোনও মহিলার প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কবে, তা-ও আশাকর্মীদের নথিবদ্ধ করার কথা। সেই মতো তাঁরা গিয়ে সন্তানসম্ভবাকে সেই তারিখ জানিয়ে দেন বলে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি।
কেন সরকারি উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছেন না কিছু সন্তানসম্ভবারা?
উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের চণ্ডীপুর গ্রামের এক মহিলা মাসখানেক আগে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সাবেক পদ্ধতিতে ঘরেই দাইয়ের হাতে প্রসব হয়েছে তাঁর। কেন তিনি হাসপাতালে যাননি? ওই মহিলা বলেন, ‘‘প্রসবের তারিখ এলে আশাকর্মী আমাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ভর্তির পরে জানতে পারি প্রসবের দেরি আছে। তাই চলে আসি। তারপরে বাড়িতেই প্রসব হয়।’’ এই এলাকার আশাকর্মী জানান, অনেকেই এটা করেন। হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। পরে আর তাঁদের খবর দেন না। আবার কিছু পরিবারের দাবি, রাস্তা খারাপ থাকার জন্য তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত অ্যাম্বুল্যান্স আসে না। সেই কারণে বাড়িতেই তাঁদের প্রসব করানো হয় দাইদের দিয়ে।
কিন্তু বাড়িতে প্রসব করানো বন্ধ করতে এই দাই বা হাতুড়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কি স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা নিতে পারে না?
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মত, কোন প্রসূতি কার কাছে যাবেন, সে ব্যাপারে নজরদারি সম্ভব নয়। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে। তাই সচেতনতা প্রচারেই আপাতত জোর দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy