Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ফের আতঙ্ক শহরে, পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন

এক রাতে দুই বাড়িতে দুষ্কৃতী হানা চন্দননগরে

সোমবার রাতে চন্দননগরের দুই এলাকার দু’টি বাড়িতে চড়াও হয় চার দুষ্কৃতী। এক বাড়িতে ঢুকতে বাধা পেয়ে কিশোর পরিচারককে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। অন্য বাড়িতে দাবিমতো টাকা না-পেয়ে মা-ছেলেকে রড ও খুর দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা।

আক্রান্ত: জখম নইমুন বিবি ও পারভেজ। নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত: জখম নইমুন বিবি ও পারভেজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

শহরের দোকানে, রাস্তায় চুরি-ছিনতাই হচ্ছিলই। এ বার সরাসরি বাড়িতেও হানা দিল সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা!

সোমবার রাতে চন্দননগরের দুই এলাকার দু’টি বাড়িতে চড়াও হয় চার দুষ্কৃতী। এক বাড়িতে ঢুকতে বাধা পেয়ে কিশোর পরিচারককে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। অন্য বাড়িতে দাবিমতো টাকা না-পেয়ে মা-ছেলেকে রড ও খুর দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ায় পর থেকে এ শহরে অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে গিয়েছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন সাধারণ মানুষ। এখন দুষ্কৃতীরা সরাসরি বাড়িতে হানা দেওয়ায় মানুষের আতঙ্ক আরও বাড়ল। ফের একবার প্রশ্নের মুখে পড়ল পুলিশের ভূমিকা। পুলিশ অবশ্য যথারীতি দু’টি ক্ষেত্রেই সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। রাতের টহল আও বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ একটি ঘটনা ঘটে দিনেমারডাঙার রায়পাড়ায়। সেখানকার বাসিন্দা, গাড়ি ব্যবসায়ী রতন সাউয়ের বাড়িতে দু’বছর ধরে পরিচারকের কাজ করছে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ার বছর চোদ্দোর ওমপ্রকাশ সাউ। ওই বাড়িতেই সে থাকে। সদর দরজায় ধাক্কার আওয়াজ পেয়ে সে খুলতেই দুই অপরিচিত লোক জোর করে ঢুকতে চায়। ওমপ্রকাশ বাধা দেওয়ায় একজন ধারাল অস্ত্র দিয়ে তার গলায় কোপ মারে। ওমপ্রকাশ লুটিয়ে পড়ে। তার চিৎকারে রতনবাবুরা বেরিয়ে আসেন। তাঁরা দেখেন, ওমপ্রকাশের গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে, বুকে একটি সিরিঞ্জ বেঁধা। কিন্তু হামলাকারীদের কাউকে দেখতে পারননি রতনবাবুরা। চেঁচামেচিতে পড়শিরাও চলে আসেন। তল্লাশি চালিয়েও তাঁরা হামলাকারীদের খোঁজ পাননি।

ওমপ্রকাশকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রতনবাবু। কারা কেন তাঁর বাড়িতে ঢুকতে গিয়েছিল, তা নিয়ে তিনি অন্ধকারে। রতনবাবু বলেন, ‘‘কেউ এলে ওমপ্রকাশই দরজা খোলে। সোমবার ওই সময় আমার কাছে কারও আসার কথা ছিল না। মনে হয় অসৎ উদ্দেশ্যেই হানা দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার হাসপাতালে ওমপ্রকাশ বলে, ‘‘দু’জনের কাউকেই চিনি না। আমি পরিচয় জানতে চাওয়া মাত্রই ওরা ধাক্কা মেরে আমাকে সরিয়ে ঢুকতে গিয়েছিল। আমি বাধা দিতেই একটা বড় ছুরি দিয়ে মারল। আমি পড়ে না-গেলে হয়তো মেরেই ফেলত।’’ হামলার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা।

দিনেমারডাঙার ওই ঘটনার ঘণ্টাদেড়েক পরে কলুপুকুরে বৃদ্ধা নইমুন বিবির বাড়িতে চড়াও হয় দুই যুবক। দরজায় ধাক্কা শুনে বৃদ্ধা খুলতেই তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বৃদ্ধা কারণ জানতে চাওয়ায় এক জন রড দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। মাথা ফেটে যায় বৃদ্ধার। তিনি পড়ে যেতেই দুই যুবক ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার ছেলে, ঘুমন্ত পারভেজের মাথায়-পেটে খুর চালিয়ে দেয়। পারভেজ গুজরাতে একটি গাড়ির গ্যারাজে কাজ করেন। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসার আগেই হামলাকারীরা চম্পট দেয়। নইমুন বিবির প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। পারভেজকেও চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

পুলিশ জানায়, বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে বৃদ্ধার ছেলের কোনও পুরনো শত্রুতা বা দিনেমারডাঙার ঘটনার যোগ রয়েছে কিনা, তা-ও দেখা হচ্ছে। নইমুন বিবি বলেন, ‘‘ওদের চিনি না। দরজা খুলতেই ওরা বলল, তোমার ছেলে অনেক রোজগার করে এনেছে। ৫০ হাজার টাকা দাও। আমি কারণ জানতে চাইতেই ওই কাণ্ড।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Injured
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE