পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে এবং মায়ের সামনেই গুলি করে, বোমা মেরে পালাল দুষ্কৃতীরা।
রবিবার ভোরে শ্রীরামপুরের বিবিরবেড় এলাকায় এই ঘটনায় জখম অজয় রায়ভৌমিক ওরফে দেবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
দিন কয়েক আগেই শ্রীরামপুর স্টেশনের কাছেই লাহিড়িপাড়া এলাকায় এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। গত ৪ এপ্রিল শ্রীরামপুর থানা এলাকারই গাঁধী সড়কে সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের বাড়ির সামনে সাতসকালে এক দুষ্কৃতীকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনাগুলির কিনারা হওয়ার আগেই ফের দুষ্কৃতী হামলা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই দেবুর উপরে হামলা বলে মনে করছেন তাঁরা। দেবু বর্তমানে বিবির বেড়ের মোড়ে পান, বিড়ি-সিগারেটের দোকান চালান, জমি-বাড়ির দালালিও করেন। তাঁর বিরুদ্ধে আগে তোলাবাজদের শাগরেদ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ছিল। হাজতবাসও করেছেন তিনি।
ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে জখম অজয়বাবুর মেয়ে ঈশিকা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ জনাপাঁচেক দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চেপে দেবুর বাড়িতে আসে। শ্রীরামপুর থানা থেকে আসছে জানিয়ে তারা গ্রিলের গেটে ধাক্কা দিয়ে দেবুকে ডাকতে থাকে। দেবুর মা পূর্ণিমাদেবী বারান্দায় আসেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছে বুঝে তিনি গেট খোলেননি। দুষ্কৃতীরা প্রথমে গেটের তালা ভেঙে ফেলে। দেবুর ঘরের দরজায় লাথি মারতেই ভিতরের ছিটকিনি ভেঙে যায়। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পূর্ণিমাদেবীকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। এর পরে দেবুকে মাটিতে ফেলে লাথি মারা হয়। গুলি চালানো হয়। দেবুর পেটে এবং হাতে গুলি লাগে। এর পরে সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে বোমা মারে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ভোরে আশপাশের কয়েক জন রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা তাঁদেরও মারধর করে বলে অভিযোগ। তদন্তকারীরা দেবুর ঘরটি ‘সিল’ করে দেন। দেবুর ১০ বছরের মেয়ে ঈশিকা বলে, ‘‘ওরা ঠাম্মাকে মারছিল। তার পরে ঠাম্মাকে ছেড়ে বাবাকে লাথি মারতে থাকে। গুলি চালিয়ে দেয়। বাবা যাতে পালাতে না পারে, সে জন্য বাবার পায়ে বোমা মারে।’’ দেবুর ভাইয়ের স্ত্রী স্বপ্না বলেন, ‘‘ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছি। আমার পাঁচ বছরের ছেলে কিছু টের পায়নি। কিন্তু ছোট ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে।’’
দেবুর ভাই পিন্টুই থানায় অভিযোগ জানান। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তাপস ভৌমিক বলেন, ‘‘দেবু মূলস্রোতে ফিরে এসেছিল। দোকানদারি করে সংসার চালাচ্ছিল। কিন্তু দুষ্কৃতীরা ওকে ভাল থাকতে দিল না। পুলিশ ঘটনার কিনারা করুক।’’
( ছবি: প্রকাশ পাল)