Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য অব্যাহত

এ বার চুঁচুড়ায় গুলিতে খুন ট্রাক-চালক

পান্ডুয়া, শ্রীরামপুরের পরে এ বার হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়া।দুষ্কৃতী তাণ্ডবে গত কয়েক মাসে তিন জন খুন হয়েছেন হুগলিতে। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা বেড়ে হল চার। সাতসকালে চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের কাছে এক ট্রাক-মালিককে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁর গ্যারাজ-ঘরে থাকা চালককে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা।

গৌতম সেন।

গৌতম সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

পান্ডুয়া, শ্রীরামপুরের পরে এ বার হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়া।

দুষ্কৃতী তাণ্ডবে গত কয়েক মাসে তিন জন খুন হয়েছেন হুগলিতে। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা বেড়ে হল চার। সাতসকালে চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের কাছে এক ট্রাক-মালিককে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁর গ্যারাজ-ঘরে থাকা চালককে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। এর জেরে আতঙ্ক ছড়ায় ওই এলাকায়। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাধারণ মানুষ।

নিহত গৌতম সেন (৪৭) চুঁচুড়ারই নবাববাগান এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তিনি খুন হতে পারেন। পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। কারা তাঁর স্বামীকে খুন করল, সে ব্যাপারে অন্ধকারে নিহতের স্ত্রী গীতা সেন। তিনি বলেন, ‘‘যারা স্বামীকে নির্মম ভাবে খুন করল তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আড়াই মাস ধরে গৌতমবাবু শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা খাদিনা মোড়ের কাছে মহাত্মা গাঁধী রোডের বাসিন্দা জয়ন্ত চক্রবর্তীর ছোট ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ গৌতমবাবু সাইকেলে টাকা আনতে যান জয়ন্তবাবুর বাড়ি থেকে। জয়ন্তবাবু তাঁকে বাড়ি সংলগ্ন গ্যারাজ-ঘরে বসিয়ে ভিতরে চলে যান। তখনই দু’টি মোটরবাইকে তিন দুষ্কৃতী ওই বাড়িতে ঢোকে। জয়ন্তবাবু বেরিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে যেতে বলে। তার পরে গৌতমবাবুর সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি হয়। তার মধ্যেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ করে পর পর তিনটি গুলি ছোড়ে। একটি গুলি লাগে গৌতমবাবুর কপালে। একটি মুখে। অন্যটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন গৌতমবাবু। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মোটরবাইক চেপে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

গুলির শব্দে জয়ন্তবাবুর বাড়ির লোকজন এবং পড়শিরা চলে আসেন। পুলিশ গিয়ে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়। জয়ন্তবাবু চুঁচুড়া থানায় খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাস্থল থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যা‌ন তদন্তকারী অফিসাররা।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্ত্রী। — তাপস ঘোষ।

গত বছরের মে মাসে রতন দে নামে হরিপালের এক বাসিন্দা চাকদহে খুন হন। তার আগে রতনবাবু এবং গৌতমবাবু একই গাড়িতে কাজ করতেন। রতনবাবুকে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গৌতমবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কয়েক মাস হাজতবাসের পরে গৌতমবাবু জামিন পান। সেই ঘটনার বদলা হিসেবে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে ব‌লে পুলিশ মনে করছে। তাদের ধারণা, এ দিন গৌতমবাবু বাড়ি থেকে বেরনোর পরই দুষ্কৃতীরা তাঁর পিছু নেয়।

শহরাঞ্চলে এ ভাবে একের পর এক খুনের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ মানুষ। মাস কয়েক আগে পাণ্ডুয়ায় দু’টি ঘটনায় দু’জন গুলিতে খুন হন। দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুরের একটি কারখানায় ডাকাতি করতে গিয়ে দুষ্কৃতীরা নিরাপত্তারক্ষীকে খুন করে। এ দিনের ঘটনার পরে জয়ন্তবাবুর প্রতিবেশী বিশ্বনাথ ধর, সুদীপ সরকাররা বলেন, ‘‘সাতসকালে বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা খুন করে গেল। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছু থাকল না।’’

জেলা পুলিশের আধিকারিকদের দাবি, প্রতিটি ঘটনারই যথাযথ তদন্ত হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও অন্যথা হবে ন‌া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chuchura tRuck driver Gun shot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE