Advertisement
০৬ মে ২০২৪
পোলবায় গ্রেফতার প্রৌঢ়

এ বার তরুণীর গায়ে লঙ্কাগুঁড়ো

পুলিশের নজরদারি চলছে ২৪ ঘণ্টা। বসেছে পুলিশ ক্যাম্প। তবু পোলবায় নারী নিগ্রহ অব্যাহত!

নিজস্ব সংবাদদাতা
পোলবা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

পুলিশের নজরদারি চলছে ২৪ ঘণ্টা। বসেছে পুলিশ ক্যাম্প। তবু পোলবায় নারী নিগ্রহ অব্যাহত!

এক সপ্তাহ আগেই এখানকার কামদেবপুরের কাছে দিল্লি রোডে এক জয়ন্তী সোরেন নামে এক তরুণীকে টেনে-হিঁচড়ে মিনি ট্রাকে তোলার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল খালাসির বিরুদ্ধে। টানাহ্যাঁচড়ায় পড়ে গিয়ে সেই ট্রাকের চাকাতেই পিষ্ট হয়ে মারা যান জয়ন্তী। তার পরে অনতিদূরে সুগন্ধা মোড়ে পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। পুলিশের মোবাইল ভ্যান চালু হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই শুক্রবার সকালে ফের এক তরুণীকে ধরে হাত ধরে টানাটানি এবং তাঁর গায়ে লঙ্কাগুঁড়ো ছুড়ে নিগ্রহের অভিযোগ উঠল এক প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধে। তবে, এ ক্ষেত্রে পুলিশ আসার আগেই বিশ্বজিৎ ধাড়া নামে বছর বাহান্নর ওই প্রৌঢ়কে ধরে মারধর শুরু করেন স্থানীয়রা। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

কিন্তু এ ভাবে পুলিশের নজরদারির মধ্যেই যে ভাবে ফের নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটল তাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে স্থানীয়দের বিশেষ করে মহিলাদের। যে তরুণীকে এ দিন নিগ্রহ করা হয়, তিনি সুগন্ধা মোড়ের একটি পরিস্রুত জলের কারখানায় কাজ করেন। আশপাশে আরও কিছু কারখানা রয়েছে। সেই সব কারখানার মহিলা কর্মীরা স্পষ্টই জানিয়েছেন, পরিস্থিতি না বদলালে কাজে আসা নিয়ে তাঁদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে। ওই তরুণীও বলেন, ‘‘এখানে অনেক দিন কাজ করছি। কিন্তু যা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে কাজ ছেড়ে দিতে হবে। এত নিরাপত্তার অভাব।’’

পুলিশ অবশ্য যথারীতি নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। ধৃতকে এ দিনই চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর সঙ্গে অভিযুক্তের পুরনো পরিচয় ছিল। মহিলা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ওই কাণ্ড। পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর বাড়ি মানকুণ্ডু়তে। তিনি কয়েক বছর ধরে ওই পরিস্রুত পানীয় জলের কারখানায় কাজ করছেন। আর এক মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে তিনি এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সুগন্ধা থেকে দিল্লি রোড ধরে হেঁটে কারখানায় যাচ্ছিলেন। ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ একটি সাইকেলে তাঁদের পিছু নেন। দুই তরুণী কারখানার কাছে পৌঁছলে তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। অভিযোগ, পরিচিত তরুণীর হাত ধরে বিশ্বজিৎ টানাটানি করে। তরুণীর চিৎকারে ওই কারখানার ট্রাক-চালক সমীর বৈরাগ্য চলে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বিশ্বজিৎ সঙ্গে থাকা লঙ্কাগুঁড়ো তাঁদের চোখে ছিটিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সমীরবাবু দৌড়ে বিশ্বজিৎকে ধরে ফেলেন। বেশ কিছু দিন ধরেই বিশ্বজিৎ ওই তরুণীকে রাস্তায় উত্যক্ত করত এবং কুপ্রস্তাব দিত বলে অভিযোগ।

জয়ন্তী সোরেনের ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাকের খালাসিকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। কয়েক মাস আগে এই সুগন্ধাতেই এক পানশালার দুই যুবক এক স্কুলছাত্রীকে রাস্তা থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে নিগ্রহের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে এলাকা। ভাঙচুর চালানো হয় পানশালায়।

শুক্রবারের ঘটনাকে ঘিরেও মানুষ ক্ষুব্ধ। ওই পানীয় জলের কারখানাটির কর্ণধার সঞ্জীব নাগ বলেন, ‘‘এখানে একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন কর্মরত মহিলারা। আমাদের কারখানায় ১০-১৫ জন মহিলা কাজ করেন। বিষয়টি আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। দিনের আলোতে এমন ঘটনা হলে রাতে কী হবে?’’ প্রিয়া পাকিরা নামে স্থানীয় এক মহিলা বলেন,‘‘ এখানে এই ধরনের ঘটনা আগে ঘটত না। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, বাড়ি থেকে একা বের হতে ভয় লাগছে। দোকানে কিছু কিনতে হলে লোক নিয়ে যাচ্ছি। রাতে প্রশ্নই নেই বাইরে যাওয়ার।’’

এই আতঙ্কে আরও কত দিন থাকতে হবে, সেটাই প্রশ্ন মহিলাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

miscreants molest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE