ভয়াবহ: অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন অরূপ। নিজস্ব চিত্র
যাত্রী সেজে উঠে হাত-পা-চোখ বেঁধে চালককে ফেলে দিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি গাড়ি ছিনতাই করে পালাল দুষ্কৃতীরা। শনিবার ভোরে হুগলির গুড়াপে ওই সড়কের ধার থেকে অরূপ সাহা নামে ওই চালককে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি গুড়াপ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকেল পর্য়ন্ত এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উদ্ধার করা যায়নি গাড়িটি। তদন্তকারীরা জানান, দুষ্কৃতী দলটিকে চিহ্নিত করে গাড়ি উদ্ধারের সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন।
বছর চৌত্রিশের অরূপ কলকাতার মানিকতলা এলাকার বাসিন্দা। চার মাস আগে রাজ্য সরকারের ‘গতিধারা’ প্রকল্পে একটি গাড়ি নেন তিনি। নিজেই চালাতেন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ২টো নাগাদ তিনি গাড়িটি নিয়ে কলকাতা স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় চার যুবক ডানকুনি যাওয়ার জন্য ১১০০ টাকার বিনিময়ে গাড়িটি ভাড়া করে। যুবকেরা হিন্দিতে কথা বলছিল। অরূপ জানান, ডানকুনি টোলপ্লাজার পরে যে পেট্রল পাম্পটি রয়েছে, সেখানেই তাদের নামানোর কথা ছিল। কিন্তু মাঝপথে ওই যুবকেরা জানায়, আরও কিছুটা এগিয়ে দিতে হবে। আরও দু’শো টাকার বিনিময়ে অরূপ রাজি হন। পেট্রল পাম্প ছাড়িয়ে আরও অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পরে যুবকেরা গাড়ি থামাতে বলে। এর পরেই তারা স্বমূর্তি ধরে।
অরূপের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা প্রথমে গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। মারধর করে হাত-পা পিছমোড়া করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। চোখও বাঁধে। সঙ্গে থাকা নগদ কয়েক হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। অরূপের কথায়, ‘‘ওই অবস্থায় ওরা আমাকে পিছনের আসনের নীচে ফেলে রাখে। আমার উপর পা দিয়ে তিন জন চেপে বসে। এক জন গাড়ি চালাতে শুরু করে।’’
এই ভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে গুড়াপ থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে কলকাতামুখী লেনে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। গুড়াপের মাজিনানের কাছে অরূপকে রাস্তার ধারে ফেলে দেয়। তার পরে গাড়ি নিয়ে কলকাতার দিকে চম্পট দেয়। ভোর চারটে নাগাদ গুড়াপ থানার টহলরত পুলিশ অরূপকে দেখতে পান। সব শুনে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা অরূপকে নিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মাজিনান, ডানকুনি, কলকাতা স্টেশনের কাছে যে যায়গা থেকে দুষ্কৃতীরা গাড়িতে উঠেছিল, সেখানে তদন্তে যান। তদন্তকারীরা জানান, ডানকুনি টোলপ্লাজায় যাতায়াতের টোল কেটেছিল দুষ্কৃতীরা।
অরূপবাবু বলেন, ‘‘বেকারদের জন্য প্রকল্পে গাড়িটা নিয়েছিলাম। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী এবং মেয়ে রয়েছে। গাড়ি হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেলাম। দুষ্কৃতীদের মতলব একটুও বুঝতে পারিনি। তা হলে গাড়ি নিয়ে নিরাপদ জায়গায় ঢুকে পড়তাম। যা অত্যাচার ওরা করল, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আর কিছুক্ষণ ওই ভাবে থাকলে কী হতো, কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy