Advertisement
০৭ মে ২০২৪
ভদ্রেশ্বরে অবাধে হুকিং

শ্রমিক মহল্লায় আলো দিচ্ছে দুষ্কৃতীরাই

যে কাজ সিইএসসি বা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা করে, ভদ্রেশ্বর পুর এলাকার কিছু জায়গায় হুকিং করে দিনের পর দিন সেই কাজ করে চলেছে কিছু দুষ্কৃতী।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০১:৩২
Share: Save:

আলো দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা!

যে কাজ সিইএসসি বা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা করে, ভদ্রেশ্বর পুর এলাকার কিছু জায়গায় হুকিং করে দিনের পর দিন সেই কাজ করে চলেছে কিছু দুষ্কৃতী। বিদ্যুতের ‘রেট’ বাঁধা। গ্রাহক-পরিবারপিছু সপ্তাহে দেড়শো টাকা। গ্রাহকেরা মূলত চটকল শ্রমিক।

গ্রামাঞ্চলে হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু কলকাতার কাছেই ভদ্রেশ্বরের সেগুনবাগান, বারাসত, মনসাতলা, পাকিজা মোড়, গেট বাজারের মতো এলাকায় কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে এই অবাধ চুরি? তার উপরে যেখানে কাছেই সিইএসসি অফিস!

ওই অফিসের কর্মীদের বিদ্যুৎ চুরির কথা অজানা নয়। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাঁদের অফিসের এক চুক্তিভিত্তিক কর্মীর যোগ রয়েছে। যে নেটওয়ার্কে দুষ্কৃতীরা চুরি করছে, তা কর্তাদের অজানা নয় বলে তাঁদের দাবি। ওই কর্মীরাও তদন্তের দাবি তুলেছেন। হুকিংয়ের কথা জানেন ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়ও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক সিপিএম নেতা হুকিং কারবারে যুক্ত। সিইএসসি-র চুক্তিভিত্তিক এক কর্মীও সরাসরি যুক্ত এই কাজে। সিইএসসি-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও ফল হয়নি।’’

সিইএসসি-র ‘লস কন্ট্রোল’ বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভদ্রেশ্বর অঞ্চলে হুকিং আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। পুরোপুরি নির্মুল হয়নি এটা বাস্তব। আমরা চেষ্টা করছি।’’

পুলিশ কী করছে?

ঘটনা হল, ২০০৯ সাল থেকে কিছু দুষ্কৃতী সিইএসসি-র ওভারহেড তার থেকে হুকিং করে সেগুনবাগান ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সমান্তরাল ব্যবস্থা জারি রাখলেও পুলিশ তা জানতে পেরেছে সম্প্রতি। সেগুনবাগানে কিছুদিন আগে সঞ্জয় খান নামে এক বোমা কারবারিকে ধরতে যায় পুলিশ। কিন্তু সঞ্জয়কে তখন পুলিশ ধরতে পারেনি। তার দলবল ওই রাতেই তেলেনিপাড়া ফাঁড়িতে হামলার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ দুষ্কৃতীকে ধরে।

পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করেই হুকিং-কারবারের কথা জানা যায়। সঞ্জয়ের ‘ডান হাত’ শেখ লালিয়া বিদ্যুৎ চুরি সিন্ডিকেটে মাথা। তার অধীনে বিভিন্ন এলাকায় হুকিং-কারবার দেখভাল করে শেখ কায়ুম, নঈম, লালবাবুর মতো দুষ্কৃতীরা। সেগুনবাগান ও সংলগ্ন এলাকায় চটকল শ্রমিকদের মহল্লা রয়েছে। তাঁরাই গ্রাহক। কারবারের শুরুতে গ্রাহক-সংখ্যা ছিল ৪০-৫০। এখন তা বেড়ে কয়েকশো। গ্রাহকেরা ঘরে বসেই বিদ্যুতের খরচ মেটান। দুষ্কৃতীদের ‘ডাকবাবু’রা টাকা নিয়ে যায়। চক্রে শাসকদলের কয়েকজনও জড়িত।

এত কিছু জানার পরেও পুলিশ হুকিং রুখছে না কেন?

এসডিপিও (চন্দননগর) রানা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমরা অল্পদিন বিষয়টি জেনেছি। বিধি অনুয়ায়ী, যে সংস্থা বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে, তাদেরই চুরি নিয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে হয়। পুলিশের সহায়তা চাইতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাইনি।”

পুলিশ চুপ। সিইএসসি চুপ। পোয়াবারো দুষ্কৃতীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE