রাত পোহালেই ধর্মতলায় সমাবেশ। এর মধ্যেই সভাস্থলে পৌঁছনোর জন্য হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস তুলে নিয়েছে শাসকদল। বুধবার থেকেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু দুই জেলায়। বাস না পেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে কারও ভরসা ট্রেকার, কারও অটো বা ম্যাটাডর। নষ্ট হল সময়।
শাসকদলের সমাবেশের জন্য বাস তুলে নেওয়া এ রাজ্যে নতুন নয়। বাম আমলে তো বটেই, গত কয়েক বছরে তৃণমূল জমানাতেও এ ছবি দেখা গিয়েছে। এ বারও ২১ জুলাইয়ের ওই সমাবেশের জন্য ছবিটা পাল্টাল না।
সমস্যা বেশি আরামবাগে। অভিযোগ, আরামবাগের বিভিন্ন প্রান্তে দূরপাল্লার বাস আটকে সেগুলিকে শুক্রবারের সমাবেশের আগে আরামবাগের বাইরে যেতে বারণ করা হয়েছে। দূরপাল্লার বাস মালিক সংগঠনের (হুগলি ইন্টার রিজিয়ন) সম্পাদক গৌতম ধোলের অভিযোগ, “বাস তুলে নেওয়ায় দুই মেদিনীপুরের সঙ্গে হুগলির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন এবং শাসকদলকে জানিয়ে সাড়া পাইনি।’’
সম্প্রতি পুরশুড়ায় এসে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘একুশে জুলাই যেন শুধু হুগলির জমায়েত দেখেই মিনি ব্রিগেড মনে হয়।’’ এর পর সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রমাণ করতে যেন উঠেপড়ে লাগেন জেলার তৃণমূল নেতারা! গোঘাট ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘প্রতি বুথ থেকে কত লোক নিয়ে যেতে হবে সেটি রাজ্য ও জেলা নেতারা আগেই ঠিক করে দেন। যে বুথ সেটি পূরণ করতে পারে না তার নেতা পরে মঞ্চে জায়গা পান না। তাই পদ বাঁচাতে সবাই নিজের মতো করে বাস ভর্তি করছেন।’’
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, দলের গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরেও বাস জোগাড়ের তৎপরতা বেড়েছে। বিরুদ্ধ গোষ্ঠী যাতে বাস নিতে না-পারে, সে জন্য বাস ‘বুক’ করে সেগুলিকে বেরোতে বারণ করা হচ্ছে।
হুগলি জেলার অন্য মহকুমায় বুকিং শুরু হলেও বাস আটকে রাখার অভিযোগ তেমন নেই। তবে, বৃহস্পতিবার থেকে অন্য মহকুমাতেও রাস্তা থেকে বাস উধাও হবে বলে আশঙ্কা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার থেকে বাস আটকানোর খবর পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
হাওড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও বাস তোলার অভিযোগ এসেছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, পাঁচারুল-হাওড়া, ডিহিভুরসুট-হাওড়া, রামপুর-হাওড়া এবং তারকেশ্বর-হাওড়া (ভায়া উদয়নারায়ণপুর) রুটের ৬৫টি বাসই তোলা হয়েছে। উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজার দাবি, ‘‘বাস শুধুমাত্র একুশে জুলাই বন্ধ থাকবে। যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে মাইকে প্রচার হবে।’’ একই অবস্থা শ্যামপুরে। শ্যামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল জানান, তাঁরা ২১টি বাস তুলেছেন।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘কর্মীদের ট্রেন ব্যবহার করতে বলেছি। একুশে জুলাই বাসের অভাব মেটাতে ট্রেকার, অটো, টোটো ইউনিয়নগুলিকে বেশি করে গাড়ি চালাতে বলা হয়েছে।’’