থমথমে: পড়ুয়া নেই, আছে পুলিশি প্রহরা। বৃহস্পতিবার, বেলুড় গার্লস হাইস্কুল প্রাইমারি সেকশনে। নিজস্ব চিত্র
প্রতি দিনই কচিকাঁচাদের ভিড় থাকে স্কুলে। তাদের চেঁচামেচির আওয়াজ রীতিমতো রাস্তা থেকেই শুনতে পান স্থানীয়েরা। কিন্তু রোজের চেনা ছবিটাই বৃহস্পতিবার অচেনা!
স্কুলের অশিক্ষক কর্মী সুশান্ত দাসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পরে এ দিন কার্যত ‘ফাঁকা’ ‘বেলুড় গার্লস হাই স্কুল প্রাইমারি সেকশন’ বিদ্যালয়টি। ৪৪৯ জন পড়ুয়া থাকলেও বুধবারের ওই ঘটনার পরে এ দিন উপস্থিত ছিল মাত্র ৪০ জন! এত কম পড়ুয়া আসায় কয়েকটি সেকশন এ দিন বন্ধ রাখতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। দু’টি কিংবা তিনটি সেকশনের পড়ুয়াকে একসঙ্গে করে চালানো হয়েছে ক্লাস।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জয়শ্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়াশোনার মান নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তুলতে পারেননি। একটা অনভিপ্রেত ঘটনার অভিযোগ উঠেছে ঠিকই কিন্তু তার জন্য অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি কেন করছেন জানি না।’’ এ দিন স্কুলে সমস্ত শিক্ষিকা-শিক্ষকেরা এলেও ফের হেনস্থার আশঙ্কায় তাঁরা বেলুড় থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করেছেন। অন্য দিকে সুশান্ত ওরফে বাপিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ কড়া পুলিশি পাহারায় হাওড়া আদালতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বিজেপির মহিলা মোর্চার সদস্যরা বিক্ষোভ দেখান। বিচারক সুশান্তকে পাঁচ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিন সকাল থেকেই স্কুলের সামনে মোতায়েন ছিল পুলিশ। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি দাবি করে স্কুলের দেওয়ালে পোস্টারও লাগানো হয়েছে। অন্য দিন মূল গেট দিয়ে পড়ুয়াদের নিয়ে অভিভাবকেরা ঢুকতে পারলেও এ দিন তা করতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে স্কুলের মূল গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে ছিলেন শিক্ষিকারা। সেখানেই পড়ুয়াদের অভিভাবকের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। ২০০৩ সাল থেকে মাত্র ১৮০০ টাকা বেতনে কাজ করা সুশান্তের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এখন সংশয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ওই প্রৌঢ় প্রতি দিন টিফিনের সময়ে শিক্ষিকা, শিক্ষকদের খাবার এনে দিতেন। সেই সময় কোনও পড়ুয়া টাকা দিয়ে লজেন্স বা ঝালমুড়ি আনতে বললে তাও এনে দিতেন। আবার খুদে পড়ুয়াদের বায়না মেটাতে প্রতি দিন পকেট ভর্তি করে লজেন্স নিয়েও আসতেন। খুদেদের কাছে তিনি বাপি কাকু বা বাপি দাদু নামেই পরিচিত।
স্কুলের পাশেই বাড়ি সুশান্ত দাসের। প্রতিবেশীরাও ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারছেন না। এক বাসিন্দা বেদপ্রকাশ শর্মা বলেন, ‘‘আমার দোকানের পিছনেই ওঁর ঘর। কোনও দিন চরিত্র নিয়ে কোনও খারাপ কথা শুনিনি, দেখিওনি।’’ প্রতিবেশী ও স্কুলের কয়েক জনের কাছে সাহায্য নিয়ে গত রবিবার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সুশান্তবাবু। তাঁর স্ত্রী কল্পনাদেবী দাবি করেন, ‘‘স্কুলে গিয়ে অভিভাবক সেজে ওই পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়েটা বারবার বলেছে, দুষ্টুমি করলে বাপি কাকু আটকে রাখবে বলেছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাচ্চাদের খুব ভালবাসে। সেটাই বিপদ হল। ’’
স্কুলে চাকরির পাশাপাশি পায়রা পোষার শখ রয়েছে সুশান্তের। বেলুড়ের যে দোকান থেকে তিনি পাখি কেনেন সেখারকার মালিক গোরাচাঁদ মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি ভাল মানুষ বলেই জানি।’’ পরিচিতরা মানতে নারাজ সুশান্তর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy