Advertisement
E-Paper

দোতলা বাড়ি নেতার, মা পেলেন ক্ষতিপূরণ!

ওই গ্রামেরই পাঁচিলঘেরা রঙিন দোতলা বাড়িটির কোনও ক্ষতি হয়নি ঘূর্ণিঝড়ে। অথচ, বাড়ির মালিকের মা  ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:২৮
দুই চিত্র: সিমলাগড়ের গোয়াড়া গ্রামে ডাক্তার মুর্মুর বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি তিনি (বাঁ দিকে)। ওই গ্রামেরই তৃণমূল নেতা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের দোতলা বাড়ি থাকা সত্বেও তাঁর মা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ। —নিজস্ব িচত্র

দুই চিত্র: সিমলাগড়ের গোয়াড়া গ্রামে ডাক্তার মুর্মুর বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি তিনি (বাঁ দিকে)। ওই গ্রামেরই তৃণমূল নেতা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের দোতলা বাড়ি থাকা সত্বেও তাঁর মা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ। —নিজস্ব িচত্র

আমপান কেড়েছে তাঁর নিরাপত্তা। ভেঙেছে ঘরের দেওয়াল। উড়ে গিয়েছে টালির চাল। এক মাস ধরে পান্ডুয়ার সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের গোয়াড়া গ্রামের ডাক্তার মুর্মুকে সস্ত্রীক মাথা গুঁজতে হচ্ছে পড়শির বাড়িতে। ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

ওই গ্রামেরই পাঁচিলঘেরা রঙিন দোতলা বাড়িটির কোনও ক্ষতি হয়নি ঘূর্ণিঝড়ে। অথচ, বাড়ির মালিকের মা ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ির মালিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা।

অবশ্য শুধু ডাক্তার মুর্মু নন, ওই গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছেন আরও অনেকে। অসহায় অবস্থায় তাঁদের দিন কাটছে। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র চার-পাঁচ জন সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। ‘বঞ্চনা’ এবং ‘দুর্নীতি’ নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। গত ২২ জুন তাঁরা বিডিও-র দ্বারস্থ হন। প্রভাবশালী নেতার মায়ের থেকে টাকা ফেরত এবং সঠিক তদন্তের দাবি জানান। একই দাবি তুলেছে বিজেপিও।

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে পাঠানো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ চলছে।’’ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের রেজিনা খাতুনের দাবি, ‘‘এখানে ২৩টি সংসদ রয়েছে। সংসদের সদস্যদের দেওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাই ব্লকে পাঠিয়েছি। তৃণমূল নেতা দেবাশিসবাবুর মায়ের নাম তালিকায় আছে কিনা এবং তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা, জানি না। খতিয়ে দেখব। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি,তাঁরা পঞ্চায়েতে এসে আবেদন করতে পারেন।’’

ওই গ্রাম থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শ্রাবণী রানা মজুমদার দাবি করেছেন, তাঁর তৈরি করা তালিকায় দেবাশিসবাবুর মায়ের নাম ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের ৪০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই তালিকাই পঞ্চায়েতে জমা দিই। এখন শুনছি, পরে কেউ দেবাশিসবাবুর মায়ের নামও তালিকায় ঢুকিয়েছেন। তিনি কে, বলতে পারব না।’’

এ নিয়ে দেবাশিসবাবু বিশেষ কথা বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘একই বাড়িতে থাকলেও আমার সঙ্গে মায়ের এখন কোনও সম্পর্ক নেই। মা ঝড়ের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা, কী ভাবে পেলেন, বলতে পারব না।’’ দেবাশিসবাবুর মা কল্পনাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ওই বাড়িতেই ছোট ছেলে শুভাশিসের সঙ্গে থাকেন। শুভাশিসের দাবি, ‘‘মা আলাদা যে ঘরে থাকেন, ঝড়ে তার দেওয়াল ভেঙে যায়। পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করি। তালিকায় মায়ের নাম আছে। তবে টাকা এসেছে কিনা জানি না।’’

সহায়-সম্বলহীন ডাক্তার মুর্মু এখন প্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য এখনও পাইনি। ঘরে চালও নেই। একশো দিনের কাজ ঠিকমতো হয়না। বড় কষ্টে আছি।’’ আর এক ক্ষতিগ্রস্ত, ৮০ বছরের শোভা চক্রবর্তীর খেদ, ‘‘টালির চাল ভেঙেছে বলে পঞ্চায়েত থেকে একটা ত্রিপল দিয়েছে। সেই ত্রিপল টাঙিয়েই দিন কাটাচ্ছি। সরকারি ক্ষতিপূরণ আসেনি। বিধবা-ভাতাও পাই না।’’

বিজেপির পান্ডুয়া মণ্ডলের সভাপতি ভজহরি শর্মার অভিযোগ, প্রধানই তাঁর দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অন্যায় ভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতি না হলেও নেতার মা টাকা পেয়ে গেলেন! আমরা চাই, তদন্ত করে সরকারের টাকা সরকারের তহবিলেই জমা করা হোক।’’

Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy