Advertisement
E-Paper

কারখানায় কর্মী-নেতার মৃত্যুতে রহস্য

ঘণ্টা দুয়েক আগেই কারখানা-কর্মী বাবার খোঁজে গিয়ে তাঁর কাজের ঘরে বা তার আশেপাশে তাঁকে পাননি ছেলে। দু’ঘণ্টা পরেই সংস্থার রক্ষীদের ফোন পেয়ে ছেলে গিয়ে দেখলেন, কারখানায় নিজের কাজের ঘরের বাইরে পড়ে আছে বাবার আধপোড়া মৃতদেহ। তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৬
মৃতের শোকার্ত পরিজন। ইনসেটে সিপিএম নেতা বলাই মালিক। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

মৃতের শোকার্ত পরিজন। ইনসেটে সিপিএম নেতা বলাই মালিক। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ঘণ্টা দুয়েক আগেই কারখানা-কর্মী বাবার খোঁজে গিয়ে তাঁর কাজের ঘরে বা তার আশেপাশে তাঁকে পাননি ছেলে। দু’ঘণ্টা পরেই সংস্থার রক্ষীদের ফোন পেয়ে ছেলে গিয়ে দেখলেন, কারখানায় নিজের কাজের ঘরের বাইরে পড়ে আছে বাবার আধপোড়া মৃতদেহ। তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

রবিবার সকালে রহস্যজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থার কারখানায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বলাই মালিক (৬৪)। তাঁর বাড়ি পঞ্চাননতলা এলাকার সদর বক্সী লেনে।

তিনি ছিলেন সিপিএমের আঞ্চলিক নেতা। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে বলাইবাবুর পরিবারের অভিযোগ। তারা খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু কে বা কারা কেন ওই প্রৌঢ় নেতাকে খুন করল, সেই রহস্য ভেদ করা যায়নি।

পুলিশি সূত্রের খবর, সিপিএমের মধ্য হাওড়ার তিন নম্বর লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক এবং ১২ নম্বর জোনাল কমিটির সদস্য বলাইবাবু ৩০ বছর ধরে ব্রিজ অ্যান্ড রুফ নামে ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় কাজ করছিলেন। শ্রমিক সরবরাহ করতেন তিনি। ছিলেন ওই কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাও। তাঁর পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, বলাইবাবু শনিবার দুপুরের খাবার খেয়ে কারখানায় যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও বাড়ি না-ফেরায় ছেলে সৈকত তাঁকে বারবার মোবাইলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

বলাইবাবু বাড়ি না-ফেরায় সৈকত এক বন্ধুকে নিয়ে রাত ৯টা নাগাদ বাবার খোঁজে কারখানায় যান। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের জানান, বলাইবাবু বিকেল ৫টা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। এ-দিক ও-দিক খোঁজাখুঁজির পরেও বলাইবাবুর হদিস না-পেয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজন বেশি রাতে গোলাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

সৈকত রবিবার জানান, সারা রাত বাবার কোনও খোঁজ না-পেয়ে এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ এক বন্ধুকে নিয়ে তিনি আবার ওই কারখানায় যান। বলাইবাবু কারখানার যে-বিভাগে কাজ করতেন এবং যে-ঘরে বসতেন, তাঁদের সেখানে নিয়ে যান সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীরা।

সৈকতের দাবি, ঘরটি তখন তালাবন্ধ ছিল। সেখানে বা আশেপাশে বলাইবাবুর কোনও খোঁজ মেলেনি। বলাইবাবুর পরিবারের অভিযোগ, দু’ঘণ্টা পরে, সকাল ৯টায় রক্ষীরা ফোন করে তাঁদের আবার ওই কারখানায় যেতে বলেন। সৈকত জানান, তাঁরা ওই সময় কারখানার ভিতরে গিয়ে দেখেন, বলাইবাবুর ঘরের বাইরে তাঁর অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ চিৎ হয়ে পড়ে আছে।

সৈকত বলেন, “দু’ঘণ্টা আগেই আমরা ওই জায়গা থেকে ঘুরে গিয়েছি। তখন সেখানে কিছুই ছিল না। পরে এসে দেখি, ওখানেই বাবার আধপোড়া মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। তা থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।” বলাইবাবুর দেহ থেকে ফুট দশেক দূরে কিছু কাগজের বোর্ড তখনও পুড়ছিল বলে সৈকত জানান।

তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছে।

• কে বা কারা কেন তাঁকে খুন করল?

• খুন করা হল কী ভাবে?

• ওই নেতাকে পুড়িয়েই মারা হয়েছে, নাকি অন্য কোথাও খুন করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল?

• বলাইবাবুর মোবাইলের টাওয়ার দেখে পুলিশ জেনেছে, তাঁর ফোনটি শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলাই ছিল। ফোনের টাওয়ার লোকেশন বলছে, তিনি বিকেল ৫টার পরেও কারখানার ভিতরে ছিলেন। তা হলে কারখানার নিরাপত্তারক্ষীরা কেন তাঁর পরিবারকে জানালেন যে, বলাইবাবুকে ৫টায় বেরিয়ে গিয়েছেন?

এই খুনের ব্যাপারে কারখানা-কর্তৃপক্ষও অন্ধকারে। ব্রিজ অ্যান্ড রুফ সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরাও ওই কর্মী-নেতার রহস্যমৃত্যুর খেই খুঁজে পাচ্ছেন না। বলাইবাবু শনিবার রাতে কারখানার ভিতরে ছিলেন কি না, তা-ও তাঁরা জানেন না। তিনি বলেন, “কী ভাবে মৃতদেহটি কারখানার ভিতরে এল এবং কারা তাতে আগুন ধরাল, আমরাও তার তদন্ত করছি।”

তদন্তকারীরা জানান, তাঁরা সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন। ময়না-তদন্ত এবং ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট এই রহস্যের উপরে আলোকপাত করতে পারে বলে তাঁদের আশা।

southbengal balai mallick police fire death factory CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy