Advertisement
১০ মে ২০২৪

হাওড়ায় ক্ষতবিক্ষত দেহ, রহস্য

লিলুয়ার পঞ্চাননতলায় একটি বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সকালে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারেরা প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির দেহে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

লিলুয়ার পঞ্চাননতলায় একটি বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সকালে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারেরা প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির দেহে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সনাতন বিশ্বাস (৫২) নামে ওই ব্যক্তির দেহে এত আঘাতের চিহ্ন কোথা থেকে এল, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সোমবার রাতে স্থানীয় ওয়ার্ড অফিস থেকে সনাতনবাবুকে বেরোতে দেখা গিয়েছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই পুলিশকে জানিয়েছেন। অনেকে আবার স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসের উল্টো দিকের ফুটপাথে তাঁকে বেধড়ক মার খেতে দেখেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কারও কারও অভিযোগ, পারিবারিক বিবাদের মীমাংসা করতেই ওই রাতে সনাতনবাবু ও তাঁর ভাই রবি বিশ্বাসকে ওয়ার্ড অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। রবির দাবি, ‘‘রোজই দাদা মদ খেয়ে অশান্তি করত। তাই ওয়ার্ড অফিসে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দাদা ওখানে কোনও কথা না শুনে আমাকেই মারতে শুরু করে। তার পরে আমি চলে আসি।’’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সনাতনবাবুকে শেষ বার ওই ওয়ার্ড অফিসের বাইরের ফুটপাথে দেখা গিয়েছিল। তা হলে সনাতনবাবুকে বাড়িতে তুলে নিয়ে এসে ঘরের মেঝেতে রেখে গেলেন কারা? রবির দাবি, ‘‘মদ খেয়ে কোথাও হয়তো পড়ে গিয়েছিল। পরে নিজেই হয়তো উঠে এসে ঘরে শুয়ে পড়ে।’’ যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, ওয়ার্ড অফিসের উল্টো দিকে সনাতনবাবুকে ফেলে পেটানোর পরে তাঁকে বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন রবি ও আরও কয়েক জন। রবি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কার্তিক রায় বলেন, ‘‘ওয়ার্ড অফিসের মধ্যেই মারপিট বেধে যায়। এর পরে পাঁচ-ছ’জন মিলে সনাতনদাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে বাড়িতে তুলে দিয়ে আসে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এখনও তাদের কাছে ঘটনাটি নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। সনাতনের স্ত্রী, মেয়ে, জামাই রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই সনাতনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না বলে পুলিশ জানিয়েছে। সনাতনের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

সোমবার রাতে মারধরের চোটেই সনাতন বিশ্বাস (৫২) মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশই লিলুয়া থানায় খবর দেন। কেন মৃতের ভাই পুলিশের কাছে বাড়িতে দেহ পড়ে থাকার কথা জানালেন না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সোমবার রাতে যে সময়ে সনাতনবাবুকে ওয়ার্ড অফিস থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছিল, তখন হাওড়া পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নারায়ণ মজুমদার সেখানে ছিলেন। এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য নারায়ণবাবুর মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ ছিল। এলাকায় গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। তবে ওই ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গৌরচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘মারামারির সময়ে নারায়ণদা অফিসেই ছিলেন। উনি মীমাংসারও চেষ্টা করেছিলেন।’’

এলাকার তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বলেন, ‘‘আমি ওই ব্যক্তির মৃতদেহের ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। পুলিশকে বলেছি, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে। আমি চাই, যদি এই ঘটনায় কেউ দোষী থাকে, তাঁর বা তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তা বলতে পারেন ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকই। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead Body Mystery Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE