Advertisement
E-Paper

জমা জল ‘ম্যান মেড’, অভিযোগ তুলে মামলা

বৃষ্টি থামার পরে কেটেছে তিন রাত। কিন্তু এখনও জল নামল না হাওড়ায়। পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েকটি ওয়ার্ডে জল নামলেও এখনও ডুবে রয়েছে লিলুয়া, কোনা, বেলগাছিয়ার মতো এলাকা। জমা জলের এই সমস্যা বৃহস্পতিবার গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের চৌকাঠেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
এখনও এমনই হাল ব্যাঁটরা এলাকায়। — দীপঙ্কর মজুমদার

এখনও এমনই হাল ব্যাঁটরা এলাকায়। — দীপঙ্কর মজুমদার

বৃষ্টি থামার পরে কেটেছে তিন রাত। কিন্তু এখনও জল নামল না হাওড়ায়। পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েকটি ওয়ার্ডে জল নামলেও এখনও ডুবে রয়েছে লিলুয়া, কোনা, বেলগাছিয়ার মতো এলাকা। জমা জলের এই সমস্যা বৃহস্পতিবার গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের চৌকাঠেও। প্রশাসন-পুরসভার গাফিলতিতেই জল কমছে না, এই অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর মামলার আর্জিপত্রে এই অবস্থাকে ‘ম্যান-মেড’ বলেই অভিহিত করা হয়েছে।

আদালতে দাখিল করা আর্জিপত্রে সুভাষবাবু বলেছেন, হাওড়া পুরসভার খোলা নর্দমাগুলি দীর্ঘ দিন ধরেই পরিষ্কার করা হয়নি। তার ফলে এগুলির বহনক্ষমতা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। তার উপরে এগুলি কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা দেওয়ায় জমা জল বেরোতে পারছে না। ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালাগুলির অবস্থাও তথৈবচ দাবি করে তাঁর অভিযোগ, এই নালাগুলি দিয়ে কোনও বর্জ্য স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পৌঁছচ্ছে না। পাম্পগুলিও ঠিক মতো কাজ করছে না।

সুভাষবাবু জানান, খোলা হোক বা ভূগর্ভস্থ নালা, ঠিক মতো সাফ না হওয়ার ফলে স্বাভাবিক সময়েই নিকাশির অবস্থা বেহাল হয়ে থাকে। ফলে জোরদার বর্ষা হলে কী হাল হবে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। এর পাশাপাশি গত দু’দশকে হাওড়ার রাস্তা উঁচু হওয়ার ফলে বর্ষার সময় নিকাশির নোংরা জল বাসিন্দাদের উঠোনে, ঘরে ঢুকে পড়ছে। মিশে যাচ্ছে পানীয় জলের সঙ্গেও। যা থেকে বাসিন্দাদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। সম্প্রতি হাওড়ায় এ ভাবে জল জমার ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রেল চলাচল। যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তব্ধ
হয়ে পড়া এবং যাত্রীদের দুর্ভোগের প্রসঙ্গও মামলার আবেদনে উল্লেখ করেছেন সুভাষবাবু।

এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের কাছে সুভাষবাবুর আবেদন, হাওড়ার বড় নর্দমাগুলিকে অবিলম্বে সাফ করতে হবে। জল জমা আটকাতে পদক্ষেপ করতে হবে। ভবিষ্যতে জল জমা আটকাতেও পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। তাই নিকাশি পরিশোধন কেন্দ্রের মেরামত প্রয়োজন। কী ভাবে এই সব কাজ করা যায় সে ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করতেও হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানান তিনি।

এ দিকে তিন দিন পরেও হাওড়া পুরসভার অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে জল না নামায় ক্ষোভ জমেছে ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, বর্ষার আগে পুরসভা ঠিক মতো নর্দমার পলি না তোলায় নিকাশি ব্যবস্থা কর্যত পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। তাই ভারি বর্ষা হতেই নিকাশি ভেঙে পড়েছে। এ দিনও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকনগর, বামনগাছি রেল কোয়ার্টার, বড়বাগান এলাকা জমা জলে ভেসেছে। একই অবস্থা দেখা গিয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেখানকার এমএসপিসি ফার্স্ট বাই লেন, নোনাপাড়া, দশরথ ঘোষ লেন, ই রোডে এখনও কোথাও কোথাও দুই থেকে আড়াই ফুট উচ্চতায় জল জমে রয়েছে। যার জেরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে করে দেওয়া হয়েছে এলাকার দু’টি স্কুল। বহু বাড়িতে জল ঢুকে থাকায় এ দিনও ত্রাণ শিবিরে কয়েক হাজার মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এ দু’টি ওয়ার্ড ছাড়াও জমা জলে ভাসছে ২১, ২২, ৪৩ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি লেন, বাই লেন। বৃহস্পতিবারও পুরোপুরি জল নামেনি ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস, টিকিয়াপাড়া, রাজারাম দাস লেন, বেণীমাধব লেন ও বেলিলিয়াস লেনে।

আদালতে দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। পুরসভা সমস্ত নিকাশি নর্দমা যে পরিষ্কার করেছে তার ছবি-সহ নথি প্রয়োজনে আমরা আদালতে পেশ করব। প্রয়োজনে পুরসভা সুভাষবাবুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবে।’’

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুভাষবাবু এক জন ব্যক্তি বিশেষ, যা বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। পুরসভা কী কাজ করেছে তা হাওড়ার মানুষ দেখছেন।’’

Municipality Rain water logged
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy