যানজটে নাকাল শহর।
ইদের আগের দিন দুপুর।
বাগনান বাসস্ট্যান্ডে থিক থিকে ভিড়। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাস, ছোট গাড়ি, অটো, ট্রেকার। সেখান থেকে যাত্রীরা নামছেন। অন্যদিকে রয়েছেন পথচারীরা। ফলে, রাস্তায় যানজট।
বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার এই চিত্র শুধু ইদ নয় বা দুর্গাপুজোর মতো উৎসবের দিনেই নয়, দেখা যায় বছরভর। উৎসবের দিনে সেই যানজট কিছুটা বাড়ে, এই যা তফাত।
শহরে লোকসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে গাড়ির সংখ্যাও। বাগনান বাসস্ট্যান্ড থেকে কলকাতা-ধর্মতলা রুটের সিটিসি বাস ছাড়াও আমতা, জয়পুর, শ্যামপুর, গাদিয়াড়া প্রভৃতি রুটের বাস ছাড়ে। একসময়ে লেভেল ক্রসিংয়ে যানজটের জন্য গাদিয়াড়া, শ্যামপুর প্রভৃতি রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উড়ালপুল তৈরির পরে ফের ওইসব রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে, বেড়েছে বাসের সংখ্যা। এ ছাড়াও দিনে ট্রেকার চলে ২০টি। বিভিন্ন ধরনের ছোট গাড়ি চলে দেড়শোটি। অটো চলে ৪০০টি। সবই দাঁড়ায় বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলায় বাসস্ট্যান্ডে আর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। ফলে, রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে পড়ছে গাড়িগুলি। তা ছাড়া, বাসস্ট্যান্ডে ঢোকা-বেরনোর রাস্তা দু’টি হয়ে গিয়েছে বোতলের মুখের মতো সংকীর্ণ। ফলে, সমস্যা বাড়ছে। একসময়ে বাসস্ট্যান্ডটি ছিল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে। আটের দশকের গোড়ায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বর্তমান বাসস্ট্যান্ডটি তৈরি হয়।
যানজটের কারণ অবশ্য শুধুই বেশি গাড়ি নয়, বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে বাজার চত্বরও। শতাধিক দোকান রয়েছে এখানে। সব সময়েই সেখানে ক্রেতার ভিড়। বাসস্ট্যান্ডের চারদিকে গড়ে উঠেছে দোকান। সেখানেও গিজগিজ করে ভিড়। এর সঙ্গে বাস, অটো রিকশা এবং ট্রেকারের যাত্রীদের মিলিয়ে তৈরি হয় দুঃসহ পরিস্থিতি। ওই বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করেন, এমন এক যাত্রীর কথায়, ‘‘প্রতিদিন একই সমস্যায় পড়তে হয়। কবে যে যানজট থেকে মুক্তি মিলবে জানি না।’’ আর এক যাত্রী বলেন, ‘‘প্রশাসনের লোকজন কি পরিস্থিতি দেখেও দেখেন না?’’
বাগনানের বাসস্ট্যান্ড চত্বর ও ডান দিকে, বাগনান স্টেশন রোড।
বাসস্ট্যান্ডটি পরিচালনা করে বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতি। তাদের পক্ষ থেকে একবার বাসস্ট্যান্ডটি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু জমি না থাকায় সেই প্রচেষ্টা বানচাল হয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, উড়ালপুলের নীচের ফাঁকা জায়গায় আরও একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের কথা স্বীকার করেছেন বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ (রাজা) সেনও। তিনি বলেন, ‘‘রাতারাতি এই সমস্যা মিটবে না। বিকেন্দ্রীকরণই বাগনান বাসস্ট্যান্ডের যানজট সমস্যা মেটানোর একমাত্র পথ। সেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অন্তত বছরখানেক সময় তো লাগবেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে।’’
লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুল শহরের এক দিকে গতি বাড়িয়েছে। কিন্তু তার বিপরীত অবস্থানে রয়েছে বাগনান বাসস্ট্যান্ড। শহরবাসী চান, এই বৈপরীত্য দ্রুত মুছে যাক। বাগনানকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। তার পরেও বাসস্ট্যান্ডের ওই দুঃসহ অবস্থা থাকলে তা বড়ই বেমানান হবে বলে মনে করেন অনেকেই।
ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy