Advertisement
E-Paper

রক্ষী তো দূর, খোলা পড়ে কাচের দরজা

গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। যে এটিএম থেকে টাকা চুরি চলছে বলে অভিযোগ, সেগুলির অধিকাংশই অরক্ষিত। আজ নজরে হুগলি।সারা রাজ্যের মতো হুগলি জেলাও ভুগছে সেই রোগেই। শুধু জিটি রোড বা অন্য বড় রাস্তার উপর থাকা এটিএমগুলি নয়। পুরসভা বা পঞ্চায়েত এলাকার ভিতরে রয়েছে একাধিক এটিএম। কোথাও নিরাপত্তার বালাই নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪৯
বিপদ: আরামবাগের একটি এটিএম কাউন্টারের দরজা খোলা পড়ে। ছবি: মোহন দাস।

বিপদ: আরামবাগের একটি এটিএম কাউন্টারের দরজা খোলা পড়ে। ছবি: মোহন দাস।

জিটি রোড চলে গিয়েছে হুগলির বুক চিরে। রাস্তার পাশে কয়েক মিটার অন্তর অন্তর একের পর এক এটিএম কাউন্টার। সারারাত খোলা থাকে, আলো জ্বলে। কিন্তু খুব প্রয়োজন হলেও একটু বেশি রাতে গাড়ি থেকে নেমে টাকা তুলে নিতে ভয় পান অনেকে। কারণ, কোথাও কোনও নিরাপত্তা রক্ষীর বালাই নেই।

সম্প্রতি কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা লাগোয়া এটিএম থেকে টাকা লুটের পর নড়ে বসেছে ব্যাঙ্কগুলি। কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন কী ভাবে সচেতন হবেন গ্রাহক, কী ভাবে হাতের আড়াল রেখে টাইপ করবেন ‘পিন নম্বর’। কারণ, আপনাকে ধরেই নিতে হবে, ওই এটিএমে দুষ্কৃতীরা কলকাঠি নেড়ে রেখেছে। অথচ, সব জেনেও সে সব কাউন্টার রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হবে না কোনও রক্ষীকে।

সারা রাজ্যের মতো হুগলি জেলাও ভুগছে সেই রোগেই। শুধু জিটি রোড বা অন্য বড় রাস্তার উপর থাকা এটিএমগুলি নয়। পুরসভা বা পঞ্চায়েত এলাকার ভিতরে রয়েছে একাধিক এটিএম। কোথাও নিরাপত্তার বালাই নেই। অনেক জায়গায় তো সারাদিন খোলাই পড়ে থাকে কাউন্টারের কাচের দরজা। কাজ করে না বাতানুকূল যন্ত্রও।

অভিযোগ, খরচ কমানোর কৌশল হিসাবে বেশিরভাগ ব্যাঙ্কই ভরসা করে শুধুমাত্র ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার উপর। নিরাপত্তারক্ষী নেই। আর যন্ত্র ব্যবহার করেই নাকি, যন্ত্রের কেরামতিতে এটিএম দখল করছে দুষ্কৃতীরা।

কিন্তু শুধুমাত্র সাইবার জালিয়াতি রুখতেই কি নিরাপত্তা রক্ষী প্রয়োজন?

গত সোমবার হুগলির মশাটে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে এসেছিলেন নবাবপুরের বাসিন্দা মৌসুমী সমাদ্দার। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বেশ লম্বা লাইন ছিল ওই কাউন্টারের সামনে। কার্ড সোয়াইপ করতে সমস্যা হচ্ছিল মৌসুমীর। অবলীলায় তিনি সাহায্য চাইলেন পিছনের এক অপরিচিত যুবকের কাছে। এমনকি মৌসুমী যখন পিন নম্বর টাইপ করছেন, তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে সেই যুবক।

মশাটের একটি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে একাধিক ব্যক্তি। ছবি- দীপঙ্কর দে

সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন প্রবীণেরা। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সঙ্গীত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের অনেকের হাত কাঁপে, অনেকে চোখে কম দেখেন। কিন্তু পেনশনের টাকা তুলতে এখন ভরসা এটিএম। সাহায্য করার মতো লোক খুঁজি সব সময়। কিন্তু সেখানেই বিপদ!”

গত ২১ জুলাই গোঘাটের কামারপুকুর চটির একটি বেসরাকারি ব্যঙ্কের এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ঠিক এ ভাবেই সাহায্যের নামে প্রতারিত হয়েছিলেন শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা অরুণকুমার সাঁতরা। তাঁর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার টাকা খোওয়া গিয়েছিল। সেই অভিযোগের এখনও কিনারাও করতে পারেনি পুলিশ।

হুগলির লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জীবনকৃষ্ণ দাস বলেন, “আসলে কোন এটিএমে রক্ষী থাকবে, কোন এটিএমে থাকবে না, কোথায় সশস্ত্র রক্ষী দেওয়া হবে, কোথায় খালি হাতে থাকবেন রক্ষী—তা স্থির করার জন্য রয়েছে ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট নিয়ম। সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই প্রতিটি ব্যাঙ্কের শাখা, এটিএম কাউন্টার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।”

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ হওয়ার পর টনক নড়বে প্রশাসনের?

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘এটিএমের নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যাঙ্কের নিজস্ব ব্যাপার। তবে রাতের রাস্তায় নিয়মিত টহলদারি চলে।” তাঁর আশ্বাস, “যখন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভবিষ্যতে বৈঠকে বসব, তখন এটিএমে নিরাপত্তা কর্মীর বিষয়টি নিশ্চয় জানাব।’’


তথ্য সহায়তা: গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, পীযূষ নন্দী ও প্রকাশ পাল

ATM Security Hoogly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy