Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বিল মেটানো নিয়ে চাপান-উতোরের জেরে সমস্যা

পাঁচ মাসধরে আঁধারে উড়ালপুল

সদা ব্যস্ত ওই উড়ালপুলে রাতে প্রতি মুহূর্তে যে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, তা মানছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তবু, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কই! বিদ্যুতের বিল কে মেটাবে তা নিয়ে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে পূর্ত (সড়ক) দফতরের চাপান-উতোরেই আঁধারে ওই উড়ালপুল।

বিফল: আলোকস্তম্ভ থাকলেও জ্বলে না আলো। ছবি: সুব্রত জানা

বিফল: আলোকস্তম্ভ থাকলেও জ্বলে না আলো। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৩
Share: Save:

বিদ্যুতের স্তম্ভ আছে। বাতিও আছে। কিন্তু জ্বলে না। পাঁচ মাস ধরে নিষ্প্রদীপ মৌড়িগ্রাম উড়ালপুল। তাতে পোয়াবারো হয়েছে দুষ্কৃতীদের।

সদা ব্যস্ত ওই উড়ালপুলে রাতে প্রতি মুহূর্তে যে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, তা মানছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তবু, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কই! বিদ্যুতের বিল কে মেটাবে তা নিয়ে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে পূর্ত (সড়ক) দফতরের চাপান-উতোরেই আঁধারে ওই উড়ালপুল।

কিছুদিন আগেই মুর্শিদাবাদে সেতু থেকে বিলে বাস পড়ে যাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। নড়বড়ে সেতুগুলির হাল খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর। কিন্তু মৌড়িগ্রাম উড়ালপুলে আলো জ্বালানো কবে হবে, মিলছে না উত্তর। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি বিদ্যুতের বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছে। আমি পূর্ত দফতরের প্রধান সচিবের কাছে চিঠি লিখে বিলের টাকা মেটানোর জন্য অনুরোধ করেছি।’’ তবে, গত বছরের ২৪ নভেম্বর জেলাশাসক ওই চিঠি দেওয়ার পরেও পূর্ত দফতরের থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। ওই চিঠির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পূর্ত দফতরের সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে। তবে, পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভিশনের এক কর্তা জানান, এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। বিলের টাকা সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতিকেই দিতে হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার মৌড়িগ্রাম লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুলটি চালু হয় ২০০৪ সালে। রেল ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে সেটি তৈরি হয়। প্রথম দিকে বিদ্যুতের বিল মেটাত রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর। কিন্তু বছর দুয়েক আগে থেকে পূর্ত (সড়ক) দফতর বিল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তাদের দাবি, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির হাতে। বিদ্যুতের বিল পঞ্চায়েত সমিতিকেই দিতে হবে।

ঝুঁকির পথ


২০০৪ সালে মৌড়িগ্রাম লেভেল ক্রিসংয়ে উড়ালপুল চালু।

মাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল হয়।


প্রথম দিকে বিদ্যুতের বিল মেটাতো পূর্ত (সড়ক) দফতর।


বছর দু’য়েক আঘে ওই বিল মেটাতে বলা হয় পঞ্চায়েত সমিতিকে।


বকেয়া প্রায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার বিলি।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ৩১ মে থেকে তারা সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির কাছে বিল পাঠাতে শুরু করে। এই উড়ালপুলে মাসে বিদ্যুতের বিল ওঠে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে। গত ৩১ মে বকেয়া ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৪৭৫ টাকার বিল পাঠানো হয় পঞ্চায়েত সমিতির কাছে। কিন্তু সমিতি টাকা মেটায়নি। তারপরেও সমিতির কাছে প্রতি মাসে বিল পাঠানো হচ্ছিল। শেষবারের মতো বিল পাঠানো হয় গত বছরের ৩১ অগস্ট। বকেয়া টাকার পরিমাণ ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৪৭। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতি বিল না-মেটানোয় অক্টোবর মাস থেকে সেতুর বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। তখন থেকেই অন্ধকারে পড়ে আছে উড়ালপুলটি।

ওই পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ তপন পাল বলেন, ‘‘গত বছর মে মাস থেকে বিদ্যুতের বিল আসতে থাকায় আমরা অবাক হয়ে যাই। বণ্টন সংস্থা জানায়, পূর্ত (সড়ক) দফতর নাকি সেতুর দায়িত্ব পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়েছে। আমরা জানলামই না, অথচ এই দায়িত্ব চাপানো হল। আমাদের টাকা কোথায় যে বিদ্যুতের বিল মেটাব?’’

আলো না-থাকায় রাতে ওই সেতু ব্যবহার করতে তাঁরা সমস্যায় পড়ে বলে জানিয়েছেন বহু গাড়ি-চালক। আলমপুর থেকে এই সেতু ব্যবহার করে আন্দুল রোড হয়ে সরাসরি সড়কপথে হাওড়া যাওয়া যায়। ফলে, সেতুতে সব সময় গাড়ির ভিড় থাকে। আন্দুল রোডের দু’দিকে আছে প্রচুর নার্সিংহোম ও হাসপাতাল। রোগী নিয়ে এই উড়ালপুল দিয়ে যেতে সমস্যায় পড়েন অ্যাম্বুল্যান্স-চালকেরাও। অন্ধকারে উড়ালপুলে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে বলে মানছে জেলা পুলিশও। আন্দুলের বাসিন্দা দুর্গাপদ দাস, পুলক মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘আমরা রাতে এই সেতু ব্যবহার করি। দুর্ঘটনার ভয়ে সবসময়েই আতঙ্কে থাকি।’’

আতঙ্ক থেকে মুক্তি কবে মিলবে, এটাই প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Renovation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE