Advertisement
E-Paper

নামে দফতর, বিপদে মেলে না পরিষেবাই

দফতরের অবস্থা বেহাল হলেও কলকাতা ঘেঁষা এই জেলায় বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা হয় না, এমন নয়। ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর বিকেলে বাগনানের মহিষরেখা সেতুর রেলিং টপকে দামোদরে পড়ে গিয়েছিল একটি গাড়ি।

নুরুল আবসার ও দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০৬
বেআব্রু: নদীতে দুর্ঘটনা ঘটলে ভরসা স্থানীয় যুবকরাই (ইনসেটে)। ২০১৪ সালে দামোদর থেকে একটি গাড়ি তুলতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। ছবি: সুব্রত জানা।

বেআব্রু: নদীতে দুর্ঘটনা ঘটলে ভরসা স্থানীয় যুবকরাই (ইনসেটে)। ২০১৪ সালে দামোদর থেকে একটি গাড়ি তুলতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। ছবি: সুব্রত জানা।

দফতর আছে নামেই। না-আছে ডুবুরি, না বিশেষ যন্ত্র, না প্রশিক্ষিত কর্মী।

এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছে হাওড়া জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। সোমবার মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে বাস দুর্ঘটনায় অন্তত ৪২ জনের মৃত্যুর পরে ওই সরকারি দফতরের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাওড়াতেও ধরা পড়েছে ওই দফতরের বেআব্রু চেহারাটা।

দফতরের অবস্থা বেহাল হলেও কলকাতা ঘেঁষা এই জেলায় বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা হয় না, এমন নয়। ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর বিকেলে বাগনানের মহিষরেখা সেতুর রেলিং টপকে দামোদরে পড়ে গিয়েছিল একটি গাড়ি। চার আরোহী কোনও ভাবে বেঁচে গেলেও সলিল-সমাধি হয় দু’জনের। সেই দুর্ঘটনায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সময়মতো না-আসায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। ওই বাহিনী হাজির হয় চার ঘণ্টা পরে। গাড়ি এবং দেহ উদ্ধার হয় রাত ১২টা নাগাদ। তাদের নিজস্ব ডুবুরি বা যন্ত্রপাতি না-থাকায় নবান্নে খবর দিয়ে তা আনাতে দেরি হয় বলে সেই সময় সাফাই ছিল জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের।

গঙ্গা, দামোদর, রূপনারায়ণে ঘেরা এই জেলায় শ’য়ে শ’য়ে লঞ্চ ও ভুটভুটি চলে। মুম্বই রোডে দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ওই সড়কে অন্তত ১৫টি ছোটবড় সেতু আছে রূপনারায়ণ ও দামোদর-সহ বিভিন্ন খালের উপরে। মুর্শিদাবাদের মতো বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে এখন জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কী ভাবে সামাল দেবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরই একাংশ।

বড় অগ্নিকাণ্ডে কী করে দুর্গতদের উদ্ধার করতে হয়, নৌকা বা লঞ্চডুবি হলে কী ভাবে উদ্ধারকাজ করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষিত কর্মীও নেই জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের হাতে। এখনও সব কিছুর জন্য মুখাপেক্ষী থাকতে হয় নবান্নের। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ স্বীকার করেছেন, বাইরে থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা করতে গেলে সময় অনেকটাই চলে যায়। ফলে, উদ্ধারকাজে দেরি হয়।

তবে, জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতার খুব কাছের জেলা হাওড়া। ফলে বড় কিছু ঘটলে নবান্নের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রশিক্ষিত কর্মী এবং জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সেই কারণেই আলাদা করে পরিকাঠামো গড়ার প্রয়োজন হয়নি।’’

তা হলে কী করে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর?

প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, অল্প যে কয়েকজন কর্মী রয়েছেন, তাঁরা সাধারণত বছরভর নির্বাচনের কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এক সময়ে বন্যা, খরা, অগ্নিকাণ্ড বা বড় দুর্ঘটনার পরে জেল‌া ত্রাণ দফতর যা করত, এখন মূলত সেই কাজই করে ওই দফতর। ভোল পাল্টে ত্রাণ দফতরই পরিণত হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে। বন্যা, খরার মতো বিপর্যয়ের আগে সতর্কতামূলক প্রচার। বিপর্যয়ের পরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব রাখা। দুর্ঘটনায় বা পুজো-পার্বণে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের স্বেচ্ছাসেবকদের কাজেও লাগায় ওই দফতর। ওই স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়। কাজের জন্য রয়েছে দু’টি গাড়ি। তাতে গাছ কাটার যন্ত্র, দড়ি, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পাথর সরানোর যন্ত্র রয়েছে। মাঝেমধ্যে ওই স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন মলে বা স্কুলে কর্মীদের অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দিতে যান।

হাওড়া পুরসভার নিজস্ব বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ রয়েছে। বছরখানেক আগে ওই বিভাগকে আধুনিক করার জন্য কিছু বিশেষ মাস্ক, ক্রেন, ডুবুরি কেনার পরামর্শ দিয়েছিল হাওড়া সিটি পুলিশ। কিন্তু তা আজও কেনা হয়নি। মেয়র রথীন চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের ওই বিভাগের সকলকে হাওড়া সিটি পুলিশ এখন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপারে আলোচনায় বসব।’’

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

Disaster management Divers Machine Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy