Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গঙ্গা দখলমুক্ত করতে সেচমন্ত্রীর নির্দেশে নোটিস

রাজ্যের বহু জায়গায় গঙ্গার পাড় দখল করে বহুতল উঠেছে। আবার কোথাও বোল্ডার ফেলে বোজানো হচ্ছে গঙ্গা। গঙ্গার মধ্যেই রীতিমতো ঢালাই করে অনেক জায়গাতেই পাড় ‘চুরি’ হয়ে যাচ্ছে। যদিও আইন বলছে, জোয়ার-ভাটা খেলে এমন জায়গায় ৪৭ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ কাজ করা যায় না।

গঙ্গার হাল পরিদর্শনে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। — দীপঙ্কর দে

গঙ্গার হাল পরিদর্শনে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। — দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

রাজ্যের বহু জায়গায় গঙ্গার পাড় দখল করে বহুতল উঠেছে। আবার কোথাও বোল্ডার ফেলে বোজানো হচ্ছে গঙ্গা। গঙ্গার মধ্যেই রীতিমতো ঢালাই করে অনেক জায়গাতেই পাড় ‘চুরি’ হয়ে যাচ্ছে। যদিও আইন বলছে, জোয়ার-ভাটা খেলে এমন জায়গায় ৪৭ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ কাজ করা যায় না। কিন্তু নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দখলদারি চলছেই। সেই দখল মুক্ত করতে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। পুর-এলাকায় গঙ্গাকে দখলমুক্ত করতে নোটিস জারির নির্দেশ দিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরপাড়ায় শিবতলা শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গার ভাঙন পরিদর্শন করেন সেচমন্ত্রী। শ্মশান লাগোয়া এলাকায় বড় বড় আবাসন গড়ে উঠছে। কোথাও আবার বোল্ডার ফেলে বেশ কয়েক ফুট ভিতর পর্যন্ত গঙ্গা বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। তা পরখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি বিভাগীয় অফিসারদের বলেছি, গঙ্গাকে এ ভাবে দখল হতে দেওয়া যাবে না। বেআইনি কাজ রুখতে আমি নোটিস জারি করতে বলেছি। না হলে বিপদ হয়ে যাবে।’’ এ দিন মন্ত্রী গঙ্গার যে অংশে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের দেখভাল করার কথা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তা সত্ত্বেও গঙ্গাকে বাঁচাতে আমি নোটিস দিতে বলেছি।’’

বালি ব্রিজ থেকে বাঁশবেড়িয়া পুরসভা পর্যন্ত গঙ্গার পাড় ঘেঁষে বিভিন্ন অংশে বহুতল আবাসন তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে উত্তরপাড়া, রিষড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়ায় এই প্রবণতা সব থেকে বেশি। গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে সাদা বালি তোলায় ইতিমধ্যেই উত্তরপাড়া এবং চন্দননগরের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। চন্দননগরে গঙ্গা লাগোয়া একটি বহুতলের নীচ থেকে মাটি সরে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে আবাসনটি ঝুলে যায়। পরে সেচ দফতর এবং পুরসভা যৌথভাবে ওই বহুতল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বালির বস্তা ফেলে আবাসনটি রক্ষা করে। আর চন্দননগরের অপর পাড়ে টিটাগড় এবং ভাটপাড়া পুর এলাকায় ব্যাপক ভাবে মেশিন লাগিয়ে গঙ্গা থেকে বালি তোলা হচ্ছে। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ভাবে গঙ্গার উপর প্রোমোটারদের অত্যাচার বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাবে গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা দেখা দেবে। পুরসভাগুলি এখনই সতর্ক না হলে পরিণতি খুবই খারাপ হবে।’’

মন্ত্রী বলেন, “আমি দফতরের অফিসারদের পাঠিয়েছিলাম শিবতলায় গঙ্গার ভাঙন দেখতে। এ দিন নিজে এলাম। ভবিষ্যতে এই এলাকায় ভাঙন রুখতে গঙ্গার পাড় বাঁধানোর পাশাপাশি শিবতলার মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্মশানে সৌন্দর্য্যায়নের কাজও করবে সেচ দফতর।’’

গত কয়েক বছর ধরেই শিবতলা শ্মশানটি গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। বেশ কিছুটা অংশ কার্যত গঙ্গার উপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। গত কয়েক বছরে বারে বারেই সমীক্ষা করা হয়। বাজেটও তৈরি করা হয়। কিন্তু পাড় বাঁধানোর কাজ বকেয়াই থেকে যায়। উত্তরপাড়ার বিধায়ক শিবতলা শশ্মানের বিষয়ে নিজে উদ্যোগী হন। এরপরই তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসার শুরুতেই উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব সেচমন্ত্রীর নজরে বিষয়টি আনেন। পুরপ্রধান বলেন, “এলাকাটি দেখে যাওয়ার জন্য সেচমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম। উনি দেখে গেলেন। আশা করি শিবতলা শ্মশানের বকেয়া কাজ এ বার দ্রুত শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

River Ganga Notice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE