Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বদলি চার শ্রমকর্তা, বিপাকে শ্রমিকেরা

বদলি হওয়া কর্তাদের মধ্যে রয়েছেন তপন হালদার, সোমা বসু, তানিয়া দত্ত এবং আরও এক জন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৪
Share: Save:

মেয়াদ শেষের আগেই অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে চন্দননগর মহকুমা শ্রম দফতরের চার কর্তাকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এর জেরে শ্রম দফতরের কাজকর্ম চূড়ান্ত ভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং শ্রমিকেরা তাঁদের প্রাপ্য নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে।

সরকারি তথ্যই বলছে, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের যতগুলি অফিস রয়েছে, তার মধ্যে কাজের নিরিখে চন্দননগর অন্যতম সেরা। বহু শ্রমিক তাঁদের বকেয়া প্রভিডেন্ড ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটির টাকা গত অর্থবর্ষে চন্দননগর মহকুমা শ্রম দফতরের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন। সেই কাজের সুবাদে রাজ্য সরকারের পুরস্কারও পেয়েছে চন্দননগর শ্রম দফতর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে সব কর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলেন, তাঁদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কেন বদলি করা হল?

বদলি হওয়া কর্তাদের মধ্যে রয়েছেন তপন হালদার, সোমা বসু, তানিয়া দত্ত এবং আরও এক জন। তপনবাবু ছিলেন ডেপুটি শ্রম কমিশনার। তাঁকে বালুরঘাটে বদলি করা হয়েছে। তানিয়াদেবী ছিলেন সহ-শ্রম কমিশনার। তিনি বদলি হয়েছেন কলকাতায়। সোমাদেবী এবং আর এক কর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। চার জনেই এক-দেড় বছর আগে ওই অফিসে যোগ দিয়েছিলেন। অন্তত তিন বছর তাঁদের থাকার কথা ছিল বলে শ্রম দফতরের একটি সূত্রের দাবি। বদলি নিয়ে তপনবাবুরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তবে, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন কিছু সংগঠনের কর্তারা মনে করছেন, এর পিছনে প্রভাবশালীদের একাংশের চাপ রয়েছে। চন্দননগর অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত জুন মাস থেকে সরকারের উপর মহলের নির্দেশে ওই চার কর্তাকে পর পর বদলি করা হয়। তার পর থেকে শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ের জন্য বিধিবদ্ধ শুনানি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকী ছাঁটাই শ্রমিকদের বকেয়া নিয়ে শুনানিও বন্ধ। কবে সেই শুনানি ফের শুরু হবে, কেউ জানেন না। এর নেপথ্যে শিল্পসংস্থার একাংশ কলকাঠি নাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে। সরকার যাঁদের পুরস্কৃত করল তাঁদেরই বদলি! এ কেমন বিচার?’’

যদিও শ্রম দফতরের এক পদস্থ কর্তা কোনও রকম চাপের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘চাকরির শর্তেই বদলির বিষয়টি আছে। এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। অন্য অফিসারেরা কাজে যোগ দিয়েছেন।’’

শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ওই চার কর্তা তাঁদের কাজের সময়সীমার মধ্যে শ্রমিকের বকেয়া অন্তত এক কোটি টাকা বিভিন্ন জুটমিল এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘সার্টিফিকেট মামলা’র মাধ্যমে আদায় করেছেন। তার পরেও ভিক্টোরিয়া জুটমিল, গোন্দলপাড়া জুটমিল, ডালহৌসি জুটমিল, নর্থব্রুক জুটমিলের বহু অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের প্রাপ্য বকেয়া রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা তাঁদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা পাননি। আবার কোনও মিলে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা বকেয়া গ্র্যাচুইটির জন্য মালিকদের দরজায় ঘুরছেন। ছাঁটাই শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়া পাচ্ছেন না। এই সব শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়ার জন্য শ্রম দফতরে আবেদন করেন। নিয়ম অনুয়ায়ী শ্রম দফতর শুনানির মাধ্যমে ‘সার্টিফিকেট মামলা’ করে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা মেটানোর ব্যবস্থা করেন। আবার বহু ক্ষেত্রে বঞ্চিত শ্রমিকেরা চন্দননগরের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রেরও দ্বারস্থ হন। ওই কেন্দ্রের মাধ্যমেও তাঁরা শ্রম দফতরে আবেদন করেন।

কিন্তু চার কর্তার বদলির জেরে ওই সব আবেদন ঠিকমতো দেখা হচ্ছে না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। শ্রম দফতর অভিযোগ মানেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Labour Officer Transfer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE