চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে দীপক। নিজস্ব চিত্র
উৎসবের রেশ কাটতেই চন্দননগরে ফিরে এল দুষ্কৃতী আতঙ্ক।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের জেলেপাড়ায় মোটরবাইকে করে বোমা নিয়ে যাওয়ার সময়ে তা ফেটে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু তো হলই, গুরুতর জখম হলেন দীপক দেশমুখ নামে এক নিরীহ যুবকও। নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে দেহ সৎকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য যিনি সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে দুষ্কৃতীদের পড়ে যাওয়া একটি সেভেন এমএম রিভলভার উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত মাসের গোড়ায় এ শহরেরই সাবিনাড়ায় অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছিল। অস্ত্র এবং তা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। কী ভাবে পুলিশ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ওই কারখানা চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার পরে নিয়মিত নজরদারির আশ্বাস দিয়েছিলেন চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, দুষ্কৃতীরা এত বেপরোয়া যে প্রাণ হাতে করে রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে।
বোমা ফেটে হত সুখদেব ঘোষাল (২৫) নামে ওই দুষ্কৃতীর বাড়ি ডুপ্লেক্স পট্টিতে। তবে দেড় বছর ধরে চুঁচুড়ার দেবীপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সে বসবাস করছিল। তার বিরুদ্ধে চন্দননগর থানায় অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। দু’বছর আগে অস্ত্র-সহ ধরা পড়ে তার জেল হেফাজত হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘কী কারণে বোমা, অস্ত্র-সহ ওই দুষ্কৃতীরা অত রাতে মোটরবাইকে যাচ্ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশিও চলছে। মৃতের গেঞ্জির ভিতর থেকে পুলিশ তিনটি তাজা গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন এবং একটি বাইকের চাবি উদ্ধার করেছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চল্লিশের দীপক চন্দননগরের বিদ্যালঙ্কার এলাকার বাসিন্দা। গঞ্জের বাজারের কাছে জেলেপাড়ায় জিটি রোড লাগোয়া গলিতে তাঁর কাকার বাড়ি। বৃহস্পতিবার কাকার মৃত্যু হয়। মা এবং দাদা-ভাইকে নিয়ে সেখানে পৌঁছন দীপক। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ দেহ সৎকার করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা তৈরি হচ্ছিলেন। ফলে, ওই বাড়ির সামনে এবং জিটি রোডে আত্মীয়-পড়শিদের ভিড় জমেছিল। সেই সময় সুখদেবরা তিন জন ওই রাস্তা ধরে একটি মোটরবাইকে এসে ভিড় দেখে কিছুক্ষণ থামে। তার পরে দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়েই তাদের হাতে থাকা বোমার ব্যাগ পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ। জখম সুখদেবকে নিয়েই বাইক চালিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। সেই সময় কোনও ভাবে তাদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটি পড়ে যায়। দীপকের ডান পা এবং দুই হাত বোমায় জখম হয়। তাঁকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সুখদেবের দেহটি মেলে দেবীপুরে তার বাড়ির কাছেই রাস্তায়। দেহে বোমা বিস্ফোরণের অনেক ক্ষতচিহ্ন ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, পালানোর সময়েই তার সঙ্গীরা বুঝে গিয়েছিল, সুখদেব বেঁচে নেই। তাই দেহটি রাস্তায় ফেলে পালায়। জেলেপাড়ার কিছু লোকজনের দাবি, বোমায় সুখদেবের এক সঙ্গীও জখম হয়। যদিও পুলিশ তার খোঁজ পায়নি।
শুক্রবার হাসপাতালে দীপক বলেন, ‘‘আমি জিটি রোড পেরোচ্ছিলাম। তখনই বিস্ফোরণটা হয়। আমি জ্ঞান হারাই। পরে দেখি আমি হাসপাতালে। শহরটা দিন দিন ভয়ের হয়ে যাচ্ছে।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রাতে পুলিশ টহল দেয় বলে শুনেছি। পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না কেন?’’ সুখদেবের মা মালতি ঘোষাল বলেন, ‘‘কী থেকে কী ঘটে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy