Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

৩৭টি মাইক বাজিয়ে লক্ষ্মীর ভাসান 

সোমবার সন্ধ্যায় এই দৃশ্য চোখে পড়েছে হুগলির হরিপালের বড়বাজারে। উপলক্ষ্য— লক্ষ্মী প্রতিমার বিসর্জন। বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়েছেন গ্রামবাসী। তবে, পুলিশ জানিয়েছে, থানায় অভিযোগ আসেনি। তাই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

দৌরাত্ম্য: এ ভাবেই হল শোভাযাত্রা। নিজস্ব চিত্র

দৌরাত্ম্য: এ ভাবেই হল শোভাযাত্রা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল ও দীপঙ্কর দে
হরিপাল শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

ইঞ্জিন ভ্যানের উপরে ডিজে বক্স। তার সামনে থরে থরে সাজানো ৩৭টি মাইক। কোনও ভ্যানে মাইকের সংখ্যা আঠাশ। সেগুলি বেজে চলেছে তারস্বরে। সেই আওয়াজে কানে তালা লাগার জোগাড়।

সোমবার সন্ধ্যায় এই দৃশ্য চোখে পড়েছে হুগলির হরিপালের বড়বাজারে। উপলক্ষ্য— লক্ষ্মী প্রতিমার বিসর্জন। বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়েছেন গ্রামবাসী। তবে, পুলিশ জানিয়েছে, থানায় অভিযোগ আসেনি। তাই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে-অনেক অনুষ্ঠানেই ডিজে-মাইকে তারস্বরে গান বাজিয়ে উদ্দাম নাচানাচি কার্যত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক বছর ধরে হরিপালের বড়বাজারে লক্ষ্মীপুজোর ভাসানেও একই কাণ্ড ঘটছে। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাণ্ডব চলে। ওই এলাকায় গোটা পঁচিশ লক্ষ্মীপুজো হয়। প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয় কয়েক কিলোমিটার দূরে কানা নদীতে। কয়েকটি কমিটি সাউন্ড সিস্টেম বাবদ ভালই খরচ করে। হুগলি, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ডিজে-মাইক ভাড়া করা হয়। এ দিনও একই ভাবে শিকেয় উঠেছে ডিজে বাজানো নিয়ে প্রশাসনিক বিধিনিষেধ।

তবে, শব্দ-সন্ত্রাসে নাজেহাল হলেও অনেকে প্রতিবাদের সাহস পাননি। স্থানীয় এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘কে প্রতিবাদ করবে! তাতে বাড়িতে চড়াও হওয়ার ভয় রয়েছে। তাই, সবাই চুপ থাকে।’’ তীব্র ওই আওয়াজ যাতে সহ্য করতে না হয়, সে জন্য এক ব্যক্তি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সোমবার সকালে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান।

সহদেব পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস পাঠক সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘অন্য জায়গা থেকে ওই বক্স- মাইক ভাড়া করে আনা হয়। অনেকেরই অসুবিধা হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জায়গায় কথা বলব।’’ হরিপাল থানা সূত্রের বক্তব্য, ডিজে নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তাই কিছু করা হয়নি। হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি (সদর) অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

ডিজেতে লাগাম পরানোর দাবিতে হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন। রাজবলহাটে ডিজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মহিলারাও। চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুরের মতো জায়গাতেও এ নিয়ে লাগাতার প্রচার চলছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চুঁচুড়ায় পুলিশের তরফেও কর্মসূচি নেওয়া হয়। দুর্গাপুজোয় ওই সব জায়গায় ডিজের দাপট অপেক্ষাকৃত অনেক কম ছিল বলে পুলিশ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি। কিন্তু মশাট, সিঙ্গুর, হরিপালে তাতে লাগাম পড়ানো যায়নি। হরিপালে লক্ষ্মীপুজোতেও এই তাণ্ডব অব্যাহত রইল।

লক্ষ্মীপুজোয় এমন হলে কালীপুজো, ছটপুজোর সময় কী পরিস্থিতি হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। পরিবেশকর্মীরা চাইছেন, ডিজের দাপট রুখতে সব জায়গাতেই পুলিশের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পুজো-উদ্যোক্তাদের সচেতন করা হোক। স্থানীয় যে সব ব্যবসায়ী ডিজে ভাড়া দেন, তাঁদের সতর্ক করা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound Speaker Immersion Laxmi Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE