নিরাপত্তারক্ষী এবং হাসপাতাল কর্মীদের নজর এড়িয়ে আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক রোগী। সোমবার দুপুরের এই ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তার চেহারা বেআব্রু হয়েছে বলে মনে করছেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের একাংশ।
পুলিশ জানায়, আত্মঘাতী রোগীর নাম দিলীপ পণ্ডিত (৪২)। বাড়ি খানাকুলের জগৎপুরে। হাসপাতালের তিন তলার একটি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন তিনি। দুপুরে স্বাস্থ্যকর্মীদের নজর এড়িয়ে হাসপাতালের পাঁচ তলার ছাদে চলে যান তিনি। তারপর ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও লিখিত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “লিখিত কোনও অভিযোগ নেই। তবে বিষয়টি জেনেছি। বিভাগীয় তদন্ত হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে পারিবারিক গোলমালের জেরে কীটনাশক খেয়েছিলেন দিলীপ। তাঁকে আশঙ্কজনক অবস্থায় প্রথমে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রাতেই তাঁকে একই চত্বরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
দিলীপের বাবা শান্তিনাথ পণ্ডিত বলেন, “কালীপুজোর রাতে পারিবারিক অশান্তিতে বিষ খেয়েছিল ছেলে। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। স্যালাইনের নল খুলে ফেলার চেষ্টা করে। সম্ভবত সেই কারণেই শয্যার হাতলের সঙ্গে ওর হাত বেঁধে রাখা হয়েছিল।’’
এ দিন ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন দিলীপের কাছেই ছিলেন তাঁর বাবা। শান্তিনাথ বলেন, ‘‘আজ ছেলের কাছেই আমি ছিলাম। দুপুর ১টা নাগাদ দড়ি ছিঁড়ে, আমাকে ধাক্কা মেরে ছাদে চলে যায়। আমি পিছন পিছন গিয়েও ধরতে পারিনি। ধরার আগেই ঝাঁপ দেয়।” এর পরেই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। শান্তিনাথের অভিযোগ, “নিরাপত্তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন। ছাদে ওঠার সিঁড়ির সব দরজা খোলা ছিল। চাবি দেওয়া ছিল না। সেই কারণেই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল।”
থানায় বা স্বাস্থ্য দফতরে এ নিয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মৌখিক ভাবে বলেছি। এখনও লিখিত অভিযোগ করিনি। এত মানুষ ওই ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন। আর যাতে এই ধরনের ঘটনা না-ঘটে, তা নিশ্চিত করুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।”